রাখাইনে 'মানবিক করিডোর': জাতিসংঘ জড়িত নয়, সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমারের হাতে – গোয়েন লুইস

রাখাইনে 'মানবিক করিডোর': জাতিসংঘ জড়িত নয়, সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমারের হাতে – গোয়েন লুইস

ঢাকা, ৪ জুন ২০২৫ – মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য 'মানবিক করিডোর' স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এই করিডোর হবে কিনা, তার সম্পূর্ণ এখতিয়ার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের ওপরই নির্ভর করছে। এমনটাই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস। তিনি বলেছেন, দুই দেশ সম্মত হলেই জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে, তবে এ বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।

আজ বুধবার (৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত 'ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ' (ডিক্যাব)-এর এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোয়েন লুইস এসব কথা বলেন। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়া নিয়ে সরকারের নীতিগত সম্মতির তথ্য প্রকাশ করার পর থেকেই বাংলাদেশে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে।

গোয়েন লুইস তার বক্তব্যে বলেন, "রাখাইনে মানবিক করিডোর হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকারের ওপর। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সরকার সম্মত হলেই এটা বাস্তবায়ন সম্ভব। দুদেশ1 সম্মতি দিলে জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে। তবে এ বিষয়ে জাতিসংঘ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।"2

তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তার লক্ষ্যে রাখাইনে প্রবেশ এখন অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। এ বিষয়ে তারা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

রোহিঙ্গা সংকট ও রাজনৈতিক সমাধান:

গোয়েন লুইস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে বলেন, "আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। এ সংকটের রাজনৈতিক সমাধান আশা করি।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সংকট এখন শুধু বাংলাদেশের ইস্যু নয়, এটি একটি বৈশ্বিক ইস্যু। তবে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এবং রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। মিয়ানমারে চলমান সংঘাত রাখাইনে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে, যেখানে মানবিক সহায়তার তীব্র প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে 'মানবিক করিডোর' স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মানবিক করিডোর নিয়ে প্রথমে নীতিগত সম্মতির কথা জানানো হলেও, পরবর্তীতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এই বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কারো সাথে 'মানবিক করিডোর' নিয়ে আলোচনা করেনি এবং করবেও না। তিনি এটিকে 'গুজব' বলেও আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও 'মানবিক করিডোর'কে 'রক্তাক্ত করিডোর' আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

এই ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্যেই গোয়েন লুইসের এই স্পষ্টীকরণ আসলো। তার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, জাতিসংঘ এই বিষয়ে দুটি সার্বভৌম দেশের সিদ্ধান্তের ওপরই মূলত নির্ভর করছে এবং তারা শুধুমাত্র সহায়তা প্রদানকারী ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।


Post a Comment

Previous Post Next Post