পরিবেশ দিবসে অনন্য উদ্যোগ: সুনামগঞ্জে ব্যক্তিগত টিলাকে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ঘোষণা!

পরিবেশ দিবসে অনন্য উদ্যোগ: সুনামগঞ্জে ব্যক্তিগত টিলাকে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ঘোষণা!

 

সুনামগঞ্জ, ৫ জুন ২০২৫ – বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সুনামগঞ্জে এক অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা, সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই তার ব্যক্তিগত প্রায় আড়াই একর টিলাকে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি স্থানীয় পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

আজ বুধবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভয়াশ্রমের ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সুনামগঞ্জের পরিবেশকর্মী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষা কর্মকর্তা এবং আব্দুল হাইয়ের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

কেন এই উদ্যোগ?

মো. আব্দুল হাই দীর্ঘদিন ধরেই প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন, নগরায়ণ ও বন উজাড়ের কারণে স্থানীয় পাখি ও বন্য প্রাণীর আবাসস্থল দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, যাদের অবাধ বিচরণের জায়গা কমে যাচ্ছে, তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।

মো. আব্দুল হাই বলেন, "আমি চেয়েছি আমার এই টিলাটা শুধু আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি না হয়ে, প্রকৃতির অংশ হয়ে উঠুক। পাখিরা এখানে নিশ্চিন্তে বাসা বাঁধুক, বন্য প্রাণীরা নির্বিঘ্নে বিচরণ করুক। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই ঘোষণা দিতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।"

অভয়াশ্রমের বৈশিষ্ট্য:

আব্দুল হাইয়ের এই আড়াই একরের টিলাটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, যা স্থানীয় পাখি ও ছোট বন্য প্রাণীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। টিলার চারপাশে প্রাকৃতিক বেষ্টনী রয়েছে এবং এখানে কোনো ধরনের মানুষের হস্তক্ষেপ বা শিকারের অনুমতি থাকবে না। তিনি নিয়মিত এই অভয়াশ্রমের পরিচর্যা করবেন এবং এর প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করবেন।

স্থানীয় প্রভাব ও প্রশংসা:

এই উদ্যোগকে স্থানীয় পরিবেশবিদরা ব্যাপকভাবে প্রশংসা করেছেন। তারা মনে করছেন, এটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং অন্যদেরও এ ধরনের কাজে উৎসাহিত করবে। সুনামগঞ্জের মতো হাওরবেষ্টিত অঞ্চলে যেখানে জীববৈচিত্র্য দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে, সেখানে এমন উদ্যোগ পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল ইসলাম এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন একটি অভয়াশ্রম তৈরি করা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এটি আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অনুপ্রেরণা যোগাবে।"

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই ধরনের ব্যক্তিগত উদ্যোগ একটি আশার আলো দেখাচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমেও পরিবেশ সুরক্ষায় বড় ধরনের অবদান রাখা সম্ভব।

Post a Comment

Previous Post Next Post