ঢাকা, ২ জুন ২০২৫ – দেশের তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তাদের জন্য সুখবর! সরকার তাদের স্টার্টআপ উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করতে একটি ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে। এই তহবিল থেকে নতুন নতুন ব্যবসা ধারণা নিয়ে কাজ করা তরুণ উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ ও বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হবে, যার লক্ষ্য দেশের উদ্ভাবনী ও কর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে এই তহবিলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠিত 'জাতীয় স্টার্টআপ বোর্ড' এই তহবিল ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে থাকবে। এই বোর্ডের প্রধান লক্ষ্যই হলো দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করা এবং তরুণদের উদ্ভাবনী ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করা।
সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য কাজ করছে:
১. উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে উৎসাহ: দেশের তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং প্রযুক্তি-নির্ভর নতুন ব্যবসা ধারণাগুলোকে উৎসাহিত করা। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করে একটি নতুন ধারা তৈরি হবে।
২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: স্টার্টআপগুলো সাধারণত নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। এই তহবিল তরুণ উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে, যা পরোক্ষভাবে দেশের বেকারত্ব কমাতে ভূমিকা রাখবে।
৩. আর্থিক বাধা দূরীকরণ: নতুন উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহ। এই তহবিল তাদের জন্য ঋণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে এবং বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে আর্থিক বাধাগুলো দূর করবে।
৪. আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি: তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
কীভাবে কাজ করবে এই তহবিল?
প্রাথমিকভাবে, এই তহবিল থেকে যোগ্য স্টার্টআপগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ এবং ইক্যুইটি বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। তহবিল ব্যবহারের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে স্টার্টআপ নির্বাচনের মানদণ্ড, ঋণের শর্তাবলী এবং বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা থাকবে। জাতীয় স্টার্টআপ বোর্ডের সদস্যরা বিভিন্ন স্টার্টআপের প্রস্তাবনা মূল্যায়ন করে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেবেন।
এর আগেও সরকার স্টার্টআপদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সালে 'স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড' নামে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে স্টার্টআপদের বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। নতুন ১০০ কোটি টাকার তহবিল সেই উদ্যোগগুলোকে আরও গতিশীল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি তহবিল দেশের স্টার্টআপ খাতকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করতে পারে। তবে, তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে প্রকৃত যোগ্য উদ্যোক্তারা এই সুবিধার সুফল পান।
Post a Comment