নেপালের নতুন আইনে সমকামী বিয়ে বৈধ, প্রথম দম্পতি পেলেন স্বীকৃতি!

 


কাঠমান্ডু, ২ জুন ২০২৫ – দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে সমকামী বিয়েকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (৩১ মে) দেশটির পার্লামেন্ট সমকামী বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একটি বিরল ঘটনা। এর পরপরই শনিবার (১ জুন) প্রথম সমকামী দম্পতি হিসেবে এক নারী জুটি বিবাহের নিবন্ধন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। নেপালের এই সিদ্ধান্ত মানবাধিকার ও সমতার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে।

এই ঐতিহাসিক বিয়ের নিবন্ধন করেছেন রুক্মিণী এবং পুনম। তারা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর স্থানীয় একটি সরকারি অফিসে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে নিবন্ধন করেন। এ সময় তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ও মানবাধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এই দম্পতি নেপালের সমকামী সম্প্রদায়ের জন্য এক নতুন আশার আলো বয়ে এনেছেন।

২০২৩ সালের নভেম্বরে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সমকামী বিবাহের পক্ষে রায় দিয়েছিল। আদালত সরকারকে সমকামী বিয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই পার্লামেন্ট এই আইন পাস করল। আদালতের এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে গণ্য করা হয়েছিল, কারণ এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশটিতে সমকামী সম্পর্ককে আইনিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

নেপাল ২০০৭ সাল থেকেই সমকামী অধিকারের বিষয়ে বেশ উদার। সে বছর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সমকামী ব্যক্তিদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর থেকে নেপালে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল এই নতুন আইন।

নেপালের এই পদক্ষেপ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। এশিয়া মহাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি দেশই সমকামী বিয়েকে বৈধতা দিয়েছে। এর মধ্যে তাইওয়ান প্রথম দেশ হিসেবে ২০১৯ সালে সমকামী বিবাহকে বৈধতা দিয়েছিল। সম্প্রতি থাইল্যান্ডও এই পথে হেঁটেছে। নেপালের এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বেশিরভাগ দেশেই সমকামী সম্পর্ক এখনও সামাজিক বা আইনিভাবে স্বীকৃত নয়।

মানবাধিকার কর্মীরা নেপালের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এটি শুধুমাত্র সমকামী দম্পতিদের জন্য নয়, বরং সমগ্র এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের জন্য সম্মান ও সমতা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে তারা সমাজে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবে এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত হবে। আশা করা হচ্ছে, নেপালের এই দৃষ্টান্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমকামী অধিকারের বিষয়ে আরও আলোচনা ও পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে।


Post a Comment

Previous Post Next Post