বারান্দায় ঘুমন্ত শিশুকে নদে ফেলে হত্যা: বাল্যবিবাহের শিকার কিশোরী মায়ের ভয়াবহ স্বীকারোক্তি


 ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২ জুন ২০২৫ – এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা নিজের তিন মাস বয়সী শিশু সন্তানকে তিতাস নদে ফেলে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে এক কিশোরী মায়ের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া এই কিশোরী মা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। নিজের জীবনের প্রতি হতাশা এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার কারণেই তিনি এমন কাজ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার (১ জুন) রাতে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও পশ্চিমপাড়া এলাকায়। নিহত শিশুর নাম লামিয়া বেগম, তার বয়স মাত্র তিন মাস। শিশুটির মা মাজিয়া বেগম (১৪) এবং বাবা তাজুল ইসলাম (২০)

সরাইল থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘরের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। শিশু লামিয়া বারান্দায় তার মায়ের পাশে ঘুমাচ্ছিল। একসময় মাজিয়া বেগম শিশুটিকে নিয়ে রাতের আঁধারে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদে চলে যান এবং শিশুটিকে নদে ফেলে দেন। এরপর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন।

সকালে শিশু লামিয়াকে বারান্দায় দেখতে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন শিশুটিকে কোথাও পাওয়া যায়নি, তখন পরিবারের সন্দেহ হয় এবং পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাজিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তিনি শিশুটিকে নদে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, মাজিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তিতাস নদে তল্লাশি চালানো হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় দীর্ঘ তল্লাশির পর আজ সোমবার (২ জুন) সকালে শিশু লামিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ওসি এমরানুল ইসলাম আরও জানান, মাজিয়া বেগম মানসিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত বলে মনে হচ্ছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার বাল্যবিবাহ হয়েছিল এবং এই অল্প বয়সেই সে মা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাল্যবিবাহের কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ এবং সংসারের চাপ সামলাতে না পেরেই সে এমন ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মাজিয়া বেগমকে আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং স্থানীয়রা বাল্যবিবাহের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছেন।


Post a Comment

Previous Post Next Post