গবেষণা প্রকল্পের ভ্যাট-ট্যাক্সের ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ: কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত, চলছে তদন্ত


 ঢাকা, ২ জুন ২০২৫ – গবেষণা প্রকল্পের তহবিল থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্সের প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের একজন সিনিয়র টেকনিক্যাল কর্মচারীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কর্মচারী মো. দেলোয়ার হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক শৃঙ্খলা এবং তদারকি ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রেজিস্টার ভবনে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে বলা হয়, বিজ্ঞান অনুষদের 'এ' টাইপ গবেষণা প্রকল্পের ভ্যাট ও ট্যাক্সের ৩০ লাখ ৮ হাজার ৮৬৪ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। অথচ, প্রকল্পের পক্ষ থেকে এই টাকা পরিশোধের দাবি করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল। এর অর্থ, এই অর্থ কোনোভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের এক আদেশে অভিযুক্ত মো. দেলোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীর আচরণ ও শৃঙ্খলা সংবিধি-২০২১ এর ৪(গ) উপবিধি অনুযায়ী গুরুতর অসদাচরণের কারণে মো. দেলোয়ার হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।" একই আদেশে তাকে বরখাস্তকালীন সময়কালে মূল বেতনের অর্ধেক খোরাকি ভাতাও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বশাককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন - বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক এবং যুগ্ম-পরিচালক (অর্থ ও নিরীক্ষা)। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন শুধু একজন টেকনিক্যাল কর্মচারীই নন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের আর্থিক লেনদেন এবং বিল পরিশোধের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এই ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, গবেষণা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ একটি গুরুতর অপরাধ। এটি গবেষণার মান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাদের দাবি, তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।

এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও স্পষ্ট করে তুলেছে। কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা সম্ভব হলো, এবং কেন এই বিষয়টি এতদিন কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তদন্ত কমিটি এসব বিষয়েও খতিয়ে দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post