মিউনিখ, ৩১ মে ২০২৫ – জার্মানির মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা। ইউরোপের সেরা ক্লাব ফুটবল আসর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল, যা বরাবরই আনন্দ আর বেদনার মিশেলে এক বিশাল ক্যানভাস। শনিবার (৩১ মে) রাতে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) এবং ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানের মধ্যকার মহারণ সেই ক্যানভাসে যোগ করেছে নতুন এক গল্প—এক দলের ঐতিহাসিক উল্লাস, অন্য দলের দীর্ঘশ্বাস। লুইস এনরিকের শিষ্যরা ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে, আর এই জয় ছিল এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের ফাইনাল জয়!

আনন্দের চিত্র: পিএসজির ঐতিহাসিক মুহূর্ত

পিএসজি, যারা কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার এবং লিওনেল মেসির মতো মহাতারকাদের নিয়েও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি, তারাই এবার তুলনামূলকভাবে কম তারকা নিয়ে ইতিহাস গড়ল। তাদের এই জয় যেন প্রমাণ করল, ফুটবল শুধুমাত্র ব্যক্তিগত তারকার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং সম্মিলিত প্রচেষ্টার কাছেই সাফল্য ধরা দেয়।

  • রেকর্ড জয়: ৫-০ গোলের বিশাল ব্যবধানের এই জয় চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালের ইতিহাসে রেকর্ড। এর আগে ১৯৯৪ সালে এসি মিলান বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল, যা ছিল আগের রেকর্ড।
  • ট্র‍েবল জয়: এই জয়ের মাধ্যমে পিএসজি ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান ও ফ্রেঞ্চ কাপ জেতার পর ঐতিহাসিক ট্রেবলও পূরণ করল। এটি ফরাসি ফুটবলে প্রথম এবং কোচ লুইস এনরিকের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ট্রেবল জয়। এনরিকে, যিনি ২০১৫ সালে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জিতেছিলেন, তিনি এখন পেপ গার্দিওলার পাশে একমাত্র কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়েছেন।
  • উদীয়মান তারাদের দ্যুতি: পিএসজির জয়ের নায়ক ছিলেন আশরাফ হাকিমি, ১৯ বছর বয়সী ডিজায়ার দুয়ে (যিনি জোড়া গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করে ম্যাচসেরা হয়েছেন), খাভিচা খাভারাতস্খেলিয়া এবং সেনি মায়ুলু। এই তরুণ তুর্কিরাই ফরাসি ক্লাবের স্বপ্ন পূরণের কারিগর।
  • এমবাপ্পে ও নেইমারের প্রতিক্রিয়া: পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং নেইমার দূর থেকেও তাদের পুরোনো ক্লাবের সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এমবাপ্পে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন, "অবশেষে বড় দিন এলো। বিজয় এবং তার সাথে পুরো ক্লাবের মর্যাদা।"
  • কোচ এনরিকের ব্যক্তিগত ছোঁয়া: কোচ লুইস এনরিকে বিজয় উদযাপনের সময় তার প্রয়াত মেয়ে জানার (Xana) প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন। একটি টি-শার্ট পরে তিনি তার মেয়ের প্রতি আবেগঘন বার্তা দেন, যা অনেক ভক্তের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। এটি পেশাগত সাফল্যের সাথে ব্যক্তিগত আবেগের এক সুন্দর মিশেল ছিল।

বেদনার চিত্র: ইন্টার মিলানের হতাশা

অন্যদিকে, ইন্টার মিলানের জন্য মিউনিখের রাত ছিল চরম হতাশার। চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে নেমেছিল তারা, কিন্তু বিশাল পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।

  • দীর্ঘশ্বাস ও খরা: দেড় দশকের খরা কাটিয়ে শিরোপা ছোঁয়ার স্বপ্ন আবারও অধরা রয়ে গেল ইতালিয়ান জায়ান্টদের। তিন মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলেও সিমোনে ইনজাঘির দল শিরোপা জিততে পারেনি।
  • ঐতিহাসিক পরাজয়: ফাইনালে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া ইন্টার মিলানের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও বেদনাদায়ক পরাজয়।
  • মিউনিখের অলিখিত নিয়ম: ইন্টার সমর্থকদের মনে ফাইনালের মাঠ মিউনিখ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছিল। কারণ এই মাঠ বরাবরই নতুন ইউরোপ সেরা খুঁজে নিতে সিদ্ধহস্ত! গতকালের ফাইনালের আগে মিউনিখে চারবার ফাইনাল হয়েছিল, প্রতিবারই নতুন চ্যাম্পিয়ন উপহার দিয়েছিল জার্মানির এই শহর। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না, পিএসজিকে নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখল ফুটবল বিশ্ব।

এভাবেই মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা চ্যাম্পিয়নস লিগের আরও একটি ফাইনালে আনন্দ-বেদনার এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখলো।


Post a Comment

Previous Post Next Post