৭ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকায় নিজের গানের মালিকানা ফিরে পেলেন টেলর সুইফট: শেষ হলো দীর্ঘ লড়াই!


 লস অ্যাঞ্জেলেস, ৩১ মে ২০২৫ – দীর্ঘ ছয় বছরের আইনি ও মানসিক যুদ্ধের পর অবশেষে নিজের প্রথম ছয়টি অ্যালবামের মাস্টার রেকর্ডিংয়ের মালিকানা ফিরে পেলেন বিশ্বখ্যাত মার্কিন গায়িকা টেলর সুইফট। ৩৫ বছর বয়সী এই পপ তারকা ৭ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা (৩৬০ মিলিয়ন ডলার) খরচ করে এই বিশাল অর্জন করেছেন। এই ঘটনা সংগীত জগতে শিল্পীদের স্বায়ত্তশাসনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবং বিলবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (৩১ মে) টেলর সুইফট এক চিঠির মাধ্যমে এই সুখবরটি তার ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। তিনি জানান, লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম শ্যামরক হোল্ডিংসের কাছ থেকে তিনি তার মাস্টার রেকর্ডিংগুলোর স্বত্ব কিনে নিয়েছেন। এই মালিকানা ফিরে পাওয়াকে তিনি তার "সবচেয়ে বড় স্বপ্ন সত্যি হওয়া" বলে বর্ণনা করেছেন।

সংগ্রামের নেপথ্যে:

২০১৯ সালে টেলর সুইফটের প্রথম রেকর্ড লেবেল বিগ মেশিন লেবেল গ্রুপ, যেখানে তার প্রথম ছয়টি অ্যালবাম রেকর্ড করা হয়েছিল, সেটির মালিকানা বিতর্কিত সংগীত নির্বাহী স্কুটার ব্রাউনের ইথাকা হোল্ডিংসের কাছে প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়ে যায়। টেলর সুইফট অভিযোগ করেন, তাকে তার মাস্টার রেকর্ডিংগুলো কেনার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং এই চুক্তি সম্পর্কে তাকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। ব্রাউনের সঙ্গে তার পুরোনো ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে তিনি এই বিক্রিকে 'সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি' বলে অভিহিত করেন।

এই ঘটনার প্রতিবাদে টেলর সুইফট তার প্রথম ছয়টি অ্যালবাম নতুন করে রেকর্ড করার (Taylor's Version) ঘোষণা দেন। তার উদ্দেশ্য ছিল মূল মাস্টার রেকর্ডিংগুলোর বাণিজ্যিক মূল্য কমিয়ে দেওয়া এবং নিজের কাজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া। তিনি 'ফিয়ারলেস (টেলরস ভার্সন)', 'রেড (টেলরস ভার্সন)', 'স্পিক নাউ (টেলরস ভার্সন)' এবং '১৯৮৯ (টেলরস ভার্সন)' ইতিমধ্যেই নতুন করে প্রকাশ করেছেন, যা মূল সংস্করণগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে জনপ্রিয়তায়।

মাস্টার রেকর্ডিংয়ের গুরুত্ব:

সংগীত শিল্পে 'মাস্টার রেকর্ডিং' মানে একটি গানের মূল অডিও রেকর্ডিং। এর মালিকানা যার কাছে থাকে, তিনিই নির্ধারণ করতে পারেন কীভাবে গানটি ব্যবহার হবে—যেমন, বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র বা টেলিভিশন সিরিজে ব্যবহারের লাইসেন্স দেওয়া। টেলর সুইফট সবসময় তার গানের প্রকাশনা অধিকার নিজের কাছে রেখেছিলেন, যার ফলে তিনি গানগুলোর লিরিক্স এবং সুরের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু মাস্টার রেকর্ডিংয়ের মালিকানা ফিরে পাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি তার গানের প্রতিটি দিক (লিরিক্স, সুর এবং মূল রেকর্ডিং) সম্পূর্ণরূপে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন।

অর্থনৈতিক দিক:

২০২০ সালে স্কুটার ব্রাউন টেলর সুইফটের প্রথম ছয়টি অ্যালবামের মাস্টার রেকর্ডিংগুলো শ্যামরক হোল্ডিংসের কাছে প্রায় ৪০৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন। তবে, টেলর সুইফট তার নিজের গান ফিরে পেতে কত টাকা দিয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে বিলবোর্ডের একটি সূত্রের খবর, তিনি প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন ডলার বা ৭ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই বিশাল অঙ্ক তার ব্যক্তিগত সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, যা তার প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলারের মোট সম্পদের একটি অংশ। এই অর্জন প্রমাণ করে, শিল্পী তার নিজের কাজ ফিরে পেতে কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

টেলর সুইফটের এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত বিজয় নয়, বরং সংগীত জগতে শিল্পীদের অধিকারের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি অন্য শিল্পীদেরও তাদের সৃষ্টিশীল কাজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post