ইলন মাস্কের রোবোট্যাক্সি আসছে জুনেই: টেক্সাসের অস্টিনে শুরু হবে পরীক্ষা


 

অস্টিন, টেক্সাস, ১ জুন ২০২৫ – বহুল প্রতীক্ষিত ইলন মাস্কের চালকবিহীন রোবোট্যাক্সি সার্ভিস অবশেষে আলোর মুখ দেখতে চলেছে। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, জুনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিন শহরে তাদের এই স্বচালিত গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে। এমনকি ১২ জুনের মধ্যে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করার একটি অভ্যন্তরীণ ডেডলাইনও নাকি টেসলা ঠিক করেছে।

মাস্ক সম্প্রতি তার এক্স (পূর্বের টুইটার) অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে টেসলার চালকবিহীন মডেল ওয়াই গাড়িগুলো (চালকবিহীন অবস্থায়) অস্টিনের রাস্তায় পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, এটি তাদের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক মাস এগিয়ে রয়েছে। আগামী মাসেই ফ্যাক্টরি থেকে সরাসরি গ্রাহকের কাছে প্রথম স্ব-চালিত ডেলিভারি দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে টেসলার।

এর আগে ইলন মাস্ক ২০২৩ সালের মধ্যেই রোবোট্যাক্সি বাজারে আনার পরিকল্পনা করলেও, নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। গত বছর অক্টোবরে ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিওতে এক অনুষ্ঠানে 'সাইবারক্যাব' নামের এই রোবোট্যাক্সির প্রোটোটাইপ উন্মোচন করা হয়। মাস্ক তখন জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের প্রথম দিকে এই গাড়ির উৎপাদন শুরু হবে এবং এর দাম ৩০ হাজার ডলারের কম হবে। এই ট্যাক্সি চালাতে মাইল প্রতি প্রায় ২০ সেন্ট খরচ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

টেসলার 'অটোপাইলট' এবং 'ফুল সেলফ-ড্রাইভিং' (এফএসডি) প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে, বিশেষ করে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। তবে টেক্সাসের আইনে নিবন্ধিত ও বিমাকৃত চালকবিহীন গাড়ি সাধারণ গাড়ির মতোই রাস্তায় চলাচল করতে পারে, অর্থাৎ চালকবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানোর আগে বাড়তি অনুমোদনের1 প্রয়োজন হয় না। সম্ভবত এই কারণেই ইলন মাস্ক টেক্সাসের অস্টিনকে তাদের রোবোট্যাক্সি চালুর জন্য বেছে নিয়েছেন।

তবে, ফিউচারিজম এবং ফোর্বসের মতো কিছু সংবাদমাধ্যম টেসলার এই রোবোট্যাক্সি চালুর পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে জানিয়েছে। তাদের মতে, টেসলার স্বায়ত্তশাসিত ড্রাইভিং পরিষেবা এখনও অনেক কিছুতে কাঙ্ক্ষিত মান পূরণ করছে না এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। অস্টিনের একাধিক রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থা এখনও টেসলার কাছ থেকে চালকবিহীন যানগুলোর সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়নি বলেও জানা গেছে। বিশেষ করে জরুরি পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত পরিকল্পনা, নির্দেশিকা বা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।

আইন বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান্ট ওয়াকার স্মিথ মনে করেন, টেসলা একবারেই বড় পরিসরে এই প্রযুক্তি চালু করতে পারবে না। সম্ভবত তারা সীমিত অঞ্চলে এবং ভালো আবহাওয়ায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করবে, অথবা দূর থেকে মানব পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখবে। দুই দরজাবিশিষ্ট এই রোবোট্যাক্সিতে কোনো স্টিয়ারিং হুইল বা প্যাডেল নেই। এটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচল করবে এবং ট্যাক্সি হিসেবে ভাড়া করা যাবে।

ইলন মাস্কের উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই প্রকল্প বাস্তবে কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, চালকবিহীন গাড়ির ভবিষ্যৎ গড়ার পথে টেসলার এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।


Post a Comment

Previous Post Next Post