বৈরী আবহাওয়ায় সেন্ট মার্টিনে নিত্যপণ্যের তীব্র সংকট, দাম বেড়েছে কয়েক গুণ!


 

কক্সবাজার, ১ জুন ২০২৫ – বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়া আর উত্তাল সাগরের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে গত ছয় দিন ধরে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের নিত্যপণ্যের সরবরাহে। দ্বীপজুড়ে এখন দেখা দিয়েছে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট, আর যা কিছু অবশিষ্ট আছে, তার দাম বেড়েছে হু হু করে। স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত ২৫ মে থেকে এই নৌপথে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের একটি বড় সমস্যা হলো, এখানে পর্যাপ্ত গুদাম না থাকায় প্রতিদিন টেকনাফ থেকেই নিত্যপণ্য নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না।

সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাদের কাছে থাকা কাঁচা তরকারি, জ্বালানি তেল, ওষুধসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্য প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট এখন বন্ধ। যে কয়েকটি দোকানে সামান্য কিছু জিনিসপত্র অবশিষ্ট আছে, সেখানেও দাম আকাশছোঁয়া। যেমন, একটি ডিম ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর এক কেজি আলু ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সাধারণ দিনগুলোতে যেখানে এসবের দাম অনেক কম থাকে, সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি তাদের জন্য এক বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম জানান, টানা ছয় দিন ধরে নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দ্বীপের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কাঁচাবাজারের পাশাপাশি অন্যান্য ভোগ্যপণ্যও খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, সূর্যের আলো না থাকায় সোলার কোম্পানিগুলোও ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহেরও সমস্যা হচ্ছে, যা জ্বালানি সংকটের কারণে আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি রয়েছে এবং সাগর অত্যন্ত উত্তাল। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত নৌযান চলাচল শুরু হবে এবং দ্বীপের সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাধারণত, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকলে বা নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল হলে সেন্ট মার্টিনের সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রতি বছরই কমবেশি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার ফলে দ্বীপবাসী নিত্যপণ্যের সংকটে ভোগেন। তবে এবারের সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে। দ্বীপে বসবাসকারী প্রায় ১০ হাজার স্থানীয় বাসিন্দা এবং সেখানে অবস্থানরত পর্যটকদের জন্য এই পরিস্থিতি রীতিমতো এক কঠিন পরীক্ষা।


Post a Comment

Previous Post Next Post