ওয়াশিংটন ডি.সি., ১ জুন ২০২৫ – যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি মানেই উচ্চ শুল্কের কড়াকড়ি। চীনের পণ্যের ওপর তিনি যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছেন, তাকে 'বজ্র আঁটুনি' বলা হলেও দেখা যাচ্ছে, সেই আঁটুনির মধ্যেও 'ফস্কা গেরো' বের হয়ে আসছে।1 বিভিন্ন আমদানিকারক ও পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান এখন শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য নিত্যনতুন কৌশল বের করছে, যার বেশিরভাগই চীনের কোম্পানিগুলো বাতলে দিচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ট্রাম্প যখনই নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছেন, তখনই আমেরিকার কিছু আমদানিকারক রহস্যময় ইমেইল আর বার্তা পাচ্ছেন। এসব বার্তায় সরাসরি শুল্ক এড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। যেমন, একটি ইমেইলে লেখা আছে, "আমরা চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক এড়াতে পারি, যেমনটা অতীতে আমরা অনেকবার করেছি।" আরেক বার্তায় আশ্বস্ত করা হচ্ছে, "আমেরিকার শুল্ককে পরাজিত করুন। মালামাল পরিবহন করুন দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে।" এমনকি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। ইমেইল, টিকটক ভিডিও এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এসব প্রস্তাব যেন বন্যা বইয়ে দিয়েছে।
আমেরিকান কোম্পানিগুলোর নির্বাহী ও সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে এই ধরনের প্রস্তাবের ব্যাপক বিস্তার দেখে মনে হচ্ছে, শুল্ক প্রতারণার এক নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাসে বিদেশি পণ্যের ওপর আমেরিকান শুল্ক বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোম্পানিগুলোকে দেওয়া প্রলোভনও বহুগুণ বেড়েছে। এই শুল্ক ফাঁকির কাজ করা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের 'সেবা'কে বৈধ সমাধান হিসেবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তারা নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ নেওয়ার বিনিময়ে আমেরিকায় অনেক কম শুল্কে পণ্য রপ্তানির পথ বাতলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক ফাঁকির এই চর্চা আসলে শুল্ক প্রতারণারই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি। সাধারণত, কোম্পানিগুলো আমেরিকান সরকারকে দেওয়া চালানের তথ্য পরিবর্তন করে শুল্ক ফাঁকি দেয়। এছাড়া, আরও কয়েকটি কৌশল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে:
১. পণ্যের দাম কম দেখানো: একটি কৌশল হলো কোনো পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে কাগজে-কলমে কম দাম দেখানো। এর ফলে পণ্যের বিপরীতে আবশ্যিক পরিশোধযোগ্য শুল্কের পরিমাণ কমে যায়।
২. পণ্যের ভুল ক্যাটাগরি দেখানো: আমদানিকারকরা আমেরিকান সরকারকে জানাতে পারেন, যে পণ্যটি আমদানি করা হচ্ছে (যেমন, শার্ট), সেটি এমন কোনো বস্তু দিয়ে তৈরি, যার ওপর কম শুল্ক আরোপ করা হয়। অর্থাৎ, পণ্যটিকে ভুল ক্যাটাগরিতে ফেলে শুল্কের হার কমানো হয়।
৩. ট্রান্সশিপমেন্ট বা তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠানো: এটি সবচেয়ে পরিচিত এবং লাভজনক কৌশলগুলির মধ্যে একটি। এই পদ্ধতিতে আমেরিকায় পৌঁছানোর আগে পণ্যকে প্রথমে কম শুল্কের কোনো দেশে (যেমন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড) পাঠানো হয়। সেখান থেকে পণ্যটিকে পরবর্তীতে আমেরিকায় পাঠিয়ে কম শুল্কের সুবিধা নেওয়া হয়। এ বছর এই কৌশলটি বেশ লাভজনক বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকান সরকার নির্দিষ্ট একটি পণ্য, তার প্রদর্শিত ডলার মূল্য এবং উৎপাদনকারী দেশের ওপর ভিত্তি করে শুল্ক নির্ধারণ করে। এসব তথ্য বদলে দিয়েই শুল্ক ফাঁকির এই কৌশলগুলো কার্যকর করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও, এই ফাঁকিগুলো দেখিয়ে তা এড়ানোর চেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক নীতির কার্যকরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ তার 'বজ্র আঁটুনি' সত্ত্বেও শুল্ক ফাঁকির 'ফস্কা গেরো'গুলো ঠিকই কাজ করছে।
Post a Comment