ঢাকা, ৪ জুন ২০২৫ – আসন্ন ঈদুল আজহা যতই ঘনিয়ে আসছে, কোরবানির পশুর হাটে গরুর দাম ততই বাড়ছে। এর ফলস্বরূপ, এবার গরু কোরবানি দেওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েক বছরের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ার কারণে কোরবানিযোগ্য পশুর দাম বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
গরুর দাম বৃদ্ধির কারণ কী?
১. গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি: পশু পালনে ব্যবহৃত দানাদার খাবার, খড়, ভুসি ইত্যাদির দাম গত এক বছরে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। খামারিদের মতে, এটিই গরুর উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের পক্ষে কম দামে গরু বিক্রি করে লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না, বরং লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
২. পরিবহন ও বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি: পশুখাদ্যের পাশাপাশি পরিবহন খরচ এবং বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। বিশেষ করে কুরবানির হাটে গরু নিয়ে আসার সময় ট্রাকভাড়া বাবদ বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে খামারি ও ব্যাপারীদের।
৩. উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি: খামারিরা জানান, একটি গরু কোরবানির উপযোগী করতে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়, তার প্রায় পুরোটাই বেড়ে গেছে। এতে গরুর প্রতি কেজির (লাইভ ওয়েট) দামও গত বছরের তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বেশি হচ্ছে। যেমন, গত বছর লাইভ ওয়েটে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৪৮০-৫০০ টাকা, এবার তা ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
৪. সরবরাহ সংকট (কিছুটা): যদিও সরকারি তথ্যে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে বলে জানানো হয়েছে (এবার প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ পশু প্রস্তুত), তবুও হাটে ভারতীয় গরু কম আসায় এবং খামারিদের মধ্যে রমজান ও কোরবানিতে ভালো দামের আশায় গরু ধরে রাখার প্রবণতা থাকায় বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে।
৫. ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট: অনেক সময় অভিযোগ ওঠে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে গরুর দাম বাড়িয়ে দেন, যার ফলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে।
গরু কোরবানি কমে যাওয়ার প্রবণতা:
উচ্চমূল্যের কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক পরিবার এবার গরু কোরবানিতে আগ্রহী নাও হতে পারে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির কারণে কোরবানির পশুর চাহিদা ১-২ শতাংশ করে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ২০২৩ সালে ১ কোটি ৪১ হাজার পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর ১ কোটি ১ লাখ থেকে ১ কোটি ২ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এই সংখ্যা কিছুটা কমেও যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এর বিকল্প হিসেবে, অনেক পরিবার ছোট পশু যেমন ছাগল বা ভেড়া কোরবানিতে আগ্রহী হতে পারে। কেউ কেউ আবার যৌথভাবে কোরবানি দেওয়ার প্রবণতাও বাড়াতে পারে, যাতে আর্থিক চাপ কিছুটা কমে।
কোরবানির হাটে শেষ মুহূর্তে দাম কিছুটা কমে আসার সম্ভাবনা থাকলেও, গো-খাদ্য ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে সামগ্রিকভাবে দাম গত বছরের তুলনায় বেশিই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, দেশের অর্থনীতিতেও একটি বড় প্রভাব ফেলে।
Post a Comment