ক্রীড়া বাজেট ফুলেফেঁপে ৮৪২ কোটি টাকা: নতুন সাকিব-সিদ্দিকুর কি এবার আসবে?


ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫ – বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বড় সুখবর! ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রায় ৮৪২ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।1 মোট ২ হাজার ৪২৩ কোটি টাকার এই বাজেট গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এক বিশাল উল্লম্ফন। এই বর্ধিত বাজেট কি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাকিব আল হাসান বা সিদ্দিকুর রহমানের মতো বিশ্বমানের আরও প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে পারবে? এই প্রশ্ন এখন ক্রীড়া মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আজ সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় এই প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। নতুন বাজেটে উন্নয়ন খাতে ১৪৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং পরিচালন খাতে ৯৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।2 গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬২৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা এবার প্রায় দ্বিগুণ।3

সাকিব ও সিদ্দিকুরের উত্থান: পথটা কি বদলে যাবে?

সাকিব আল হাসান এবং সিদ্দিকুর রহমান—বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাকিব ক্রিকেটকে বিশ্ব মঞ্চে নিয়ে গেছেন, আর সিদ্দিকুর গলফকে। তাদের উত্থান ছিল মূলত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার ফল। সাকিব বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে উঠে এসেছেন, যা তাকে প্রাথমিক সুযোগ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার পেছনে তার নিজের কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং খেলার প্রতি অবিশ্বাস্য নিবেদনই মূল ভূমিকা রেখেছে।

অন্যদিকে, সিদ্দিকুর রহমান গলফের মতো তুলনামূলকভাবে নতুন একটি খেলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তার পথচলা ছিল আরও কঠিন, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন ছিল সীমিত। নিজের প্রতিভা এবং দৃঢ় সংকল্প দিয়েই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন।

বর্ধিত বাজেট কি নতুন দিগন্ত খুলবে?

বাজেট বৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিভা অন্বেষণ এবং দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি করা। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ, তৃণমূল থেকে প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম এবং বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থাকে অনুদান প্রদানের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।4 বর্ধিত বাজেট এসব কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

  • তৃণমূল থেকে প্রতিভা অন্বেষণ: যদি এই বাজেট সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য প্রতিভাকে খুঁজে বের করে তাদের পরিচর্যার সুযোগ তৈরি হবে।
  • আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা: ক্রীড়া স্থাপনা নির্মাণ, উন্নয়ন ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে।
  • ক্রীড়া বিজ্ঞানে বিনিয়োগ: খেলার পাশাপাশি ক্রীড়া বিজ্ঞান, পুষ্টি এবং মনোবিজ্ঞানে বিনিয়োগ করা হলে খেলোয়াড়দের সার্বিক উন্নতি সম্ভব।
  • পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি: ক্রীড়াঙ্গনকে আরও পেশাদার করে তুলতে এই বাজেট সহায়ক হতে পারে, যা খেলোয়াড়দের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করবে।

তবে, শুধু বাজেট বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। এই অর্থের সঠিক ব্যবহার, স্বচ্ছতা, এবং কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা না গেলে এই বিপুল বরাদ্দও কাঙ্ক্ষিত ফল নাও দিতে পারে।

ক্রীড়া বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই বাজেট সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে ক্রিকেট, গলফ, ফুটবল বা অন্য কোনো খেলায় সাকিব বা সিদ্দিকুরের মতো আরও অনেক তারকা বেরিয়ে আসতে পারে, যারা দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। এখন দেখার পালা, এই সুযোগ কতটা কাজে লাগানো হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post