![]() |
| ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে চরম আতঙ্ক: ভারতীয় সেনার গুলিতে ১০ বিদ্রোহী নিহত, ভেঙেছে অলিখিত সমঝোতা |
ঢাকা, ৪ জুন ২০২৫ – ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের তামু জেলার বাসিন্দারা, যারা ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকেন, তারা এখন তীব্র ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এই আতঙ্কের মূল কারণ হলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে মিয়ানমারের ১০ নাগরিকের (যাদের মধ্যে তিনজন কিশোর) লাশ উদ্ধার। এই ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি 'অলিখিত সমঝোতা' ভেঙে পড়েছে বলে জানা গেছে, যা এই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই খবর প্রকাশ করেছে। নিহতরা সবাই মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী ঐক্য সরকারের (ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট - এনইউজি) সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)-এর অংশ পা কা ফা (পিকেপি) এর সদস্য বলে দাবি করা হচ্ছে। গত ১৪ মে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অভিযানে এই ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে।
কী নিয়ে আতঙ্ক?
- অলিখিত সমঝোতা ভঙ্গ: ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সাথে ভারতের ১,৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে এক ধরনের নীরব সমঝোতা চলে আসছিল। ভারতীয় ভূখণ্ডে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই আত্মগোপনে থাকত এবং ভারতীয় বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নিত না। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পর সেই ভারসাম্য সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, যা সীমান্ত অঞ্চলে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
- পাল্টা অভিযোগ ও অবিশ্বাস: মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার (এনইউজি) পাল্টা অভিযোগ করেছে যে, বিদ্রোহীরা ভারতের ভূখণ্ডে গুলিবিনিময়ে নিহত হননি। বরং তারা আটক হওয়ার পর নির্যাতন করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই অভিযোগ ভারতীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং দুই পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে।
- শরণার্থীদের ভয়: হাজার হাজার মিয়ানমারীয় শরণার্থী, যারা ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তাদের ভয়, এই হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্ত পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে এবং তারা বিপদে পড়তে পারেন।
- মনিপুরে জাতিগত সংঘাত: মণিপুর রাজ্যে গত দুই বছর ধরে জাতিগত সহিংসতা চলছে, যেখানে মেইতি এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার থেকে আসা যোদ্ধারা কুকিদের সাথে যোগ দিচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করছে। এই হত্যাকান্ড মনিপুরের সংঘাতকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
- কাঁটাতার বসানোর প্রস্তুতি: ভারত সরকার পুরো ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি ফ্রি মুভমেন্ট রেজিমের (FMR) আওতায় সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের চলাচল সীমিত করবে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
.jpeg)
Post a Comment