ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫ – যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ম্যাথু মিলার বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল 'নিঃসন্দেহে যুদ্ধাপরাধ' করেছে। তার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ও তদন্তের দাবি উঠেছে। তবে, তিনি এও বলেছেন যে, তার মতে, গাজায় 'গণহত্যা' হয়নি।
গতকাল সোমবার (২ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের 'ট্রাম্প ১০০' পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাথু মিলার এই মন্তব্য করেন। তিনি ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়কালে তিনি প্রায়শই গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন এবং মার্কিন সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল।
মিলার তার সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমি মনে করি না এটি (গাজায় যা ঘটেছে) গণহত্যা। কিন্তু ইসরায়েল নিঃসন্দেহে যুদ্ধাপরাধ করেছে—এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।"
তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, যুদ্ধাপরাধ নিয়ে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একটি হলো, যখন কোনো রাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধাপরাধের নীতি অনুসরণ করে অথবা এমন বেপরোয়া আচরণ করে, যা সরাসরি যুদ্ধাপরাধকে সহায়তা বা প্ররোচনা দেয়। এই বিষয়ে তিনি বলেন, "ইসরায়েলি রাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধ করেছে কিনা, তা আমার কাছে এখনও একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন।"
তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমার কাছে যা প্রায় নিশ্চিতভাবে উন্মুক্ত প্রশ্ন নয়, তা হলো – এমন কিছু স্বতন্ত্র ঘটনা ঘটেছে, যা যুদ্ধাপরাধ। যেখানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করেছে।"
মিলার ইসরায়েলের জবাবদিহিতা ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, "আমরা এখনও তাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক সদস্যকে জবাবদিহির আওতায় আনতে দেখিনি।" তিনি প্রশ্ন তোলেন, ইসরায়েল আদৌ এটি করবে কিনা, তাও একটি 'উন্মুক্ত প্রশ্ন'।
তার এই বক্তব্য বাইডেন প্রশাসনের পুরোনো অবস্থান থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তার মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকাকালীন মার্কিন সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। মিলার নিজেও স্বীকার করেছেন যে, সরকারি দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করতে পারতেন না, কেবল মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তই তুলে ধরতেন।
মিলার আরও উল্লেখ করেন যে, গাজা ও ইউক্রেন নীতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ভেতরেই নীতি কীভাবে পরিচালনা করা হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই মতবিরোধ ছিল।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) উভয়ই গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে তদন্ত করছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাথু মিলারের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনা তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Post a Comment