যুদ্ধবিরতি না হলেও বন্দিবিনিময় ও মরদেহ হস্তান্তরে রাজি রাশিয়া-ইউক্রেন: ইস্তাম্বুল আলোচনায় অগ্রগতি



ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫ – দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চললেও মানবিকতার খাতিরে বন্দিবিনিময় এবং নিহত সেনাদের মরদেহ হস্তান্তরে একমত হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গতকাল সোমবার (২ জুন) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতির কোনো অগ্রগতি না হলেও, এই দুটি বিষয়ে উভয় পক্ষই একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছেছে।

তুরস্কের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় উভয় দেশের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল। রাশিয়ার প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেদিনস্কি এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। আলোচনা শেষে উভয় পক্ষই জানিয়েছে, গুরুতর অসুস্থ ও আহত যুদ্ধবন্দিদের পাশাপাশি ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ সেনাদের 'সকলের জন্য সকলে' (all-for-all) ভিত্তিতে বিনিময় করতে তারা সম্মত হয়েছে।

বন্দিবিনিময় ও মরদেহ হস্তান্তর চুক্তির বিস্তারিত:

  • ব্যাপক বন্দিবিনিময়: উভয় পক্ষই অন্তত ১,০০০ করে যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। এটি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বন্দিবিনিময় চুক্তি হতে যাচ্ছে। এতে গুরুতর অসুস্থ, আহত এবং তরুণ সেনাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
  • মরদেহ হস্তান্তর: রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয় পক্ষই তাদের নিহত সেনাদের মরদেহ হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে উভয় দেশ ৬,০০০ করে মোট ১২,০০০ নিহত সেনার মরদেহ হস্তান্তরে রাজি হয়েছে। এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবারগুলোর জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনবে।
  • চিকিৎসা কমিশন গঠন: উভয় পক্ষই স্থায়ী চিকিৎসা কমিশন গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এই কমিশন নিয়মিতভাবে গুরুতর আহত সেনাদের তালিকা তৈরি করবে এবং তাদের বিনিময়ের প্রক্রিয়া সহজ করবে।
  • শিশু প্রত্যাবর্তন: ইউক্রেন রাশিয়াকে ৩৩৯ জন শিশুর একটি তালিকা দিয়েছে, যাদের চলমান সংঘাতের কারণে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাশিয়া এই প্রতিটি মামলা গভীরভাবে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। রাশিয়া সম্প্রতি ১০১ জন শিশুকে ফেরত দিয়েছে এবং ইউক্রেনীয় পক্ষ থেকে ২২ জন শিশু ফেরত এসেছে।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও মতবিরোধ:

বন্দিবিনিময় এবং মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে চুক্তি হলেও, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। রাশিয়া একটি ২ থেকে ৩ দিনের স্থানীয় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যা মূলত নিহত সেনাদের মরদেহ উদ্ধারের জন্য। তবে ইউক্রেন এই সীমিত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে একটি 'শর্তহীন যুদ্ধবিরতি'র দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া ৬,০০০ মরদেহের মধ্যে মাত্র ১৫% শনাক্ত করা গেছে এবং ইউক্রেনকে নিশ্চিত করতে হবে যে রাশিয়ার ফেরত দেওয়া মরদেহগুলো সত্যিই ইউক্রেনীয় সেনাদের।

যদিও ইস্তাম্বুল আলোচনায় স্থায়ী শান্তি চুক্তির বিষয়ে কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি, তবে বন্দিবিনিময় এবং মরদেহ হস্তান্তরের এই চুক্তিকে একটি ইতিবাচক মানবিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ চলমান সংঘাতের মধ্যেও দুই দেশের মধ্যে ন্যূনতম মানবিক সমন্বয়ের পথ খুলে দিল।


Post a Comment

Previous Post Next Post