ঢাকা, ৩১ মে ২০২৫ – পরিবেশ সচেতনতা আর নৈতিক ভোগবাদ—এই দুটো শব্দ এখন আর শুধু আলোচনার টেবিলে সীমাবদ্ধ নেই, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে। চারিদিকে একটা নতুন ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে: মানুষ এখন পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে, বর্জ্য কমানোর চেষ্টা করছে, আর তার সাথে সমর্থন জানাচ্ছে স্থানীয়, টেকসই উদ্যোগগুলোকে। এই পরিবর্তন আসলে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে বাঁচাতে এবং একটা সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপহার দিতে খুবই জরুরি।
একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, বাজারে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা কেমন বাড়ছে। আগে যেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল বাঁধাহীন, এখন মানুষ ব্যাগ নিতে দোকানে যাচ্ছে, অথবা বেছে নিচ্ছে পুনঃব্যবহারযোগ্য জিনিস। প্লাস্টিক বোতলের বদলে মেটাল বা কাঁচের বোতল, একবার ব্যবহারযোগ্য জিনিসের বদলে বারবার ব্যবহার করা যায় এমন পণ্য—এগুলো এখন শুধু শৌখিনতা নয়, বরং সচেতন মানুষের প্রতিদিনের অভ্যাস। পোশাক থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পণ্য, সবক্ষেত্রেই ভোক্তারা এখন 'ইকো-ফ্রেন্ডলি' অপশনগুলো খুঁজছে। এর পেছনে কাজ করছে পরিবেশের ওপর পণ্য উৎপাদনের প্রভাব, এবং ব্যবহারের পর বর্জ্য হিসেবে সেগুলোর কী পরিণতি হয়—এই ভাবনা।
শুধু পণ্য ব্যবহারেই নয়, বর্জ্য কমানোর ক্ষেত্রেও মানুষের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। ঘরে ঘরে এখন বর্জ্য পৃথকীকরণ, কম্পোস্ট তৈরি, আর অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকার চল বেড়েছে। 'জিরো ওয়েস্ট' বা 'কম বর্জ্য' জীবনধারার ধারণাটি ধীরে ধীরে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ বুঝতে পারছে যে, প্রতিটি অতিরিক্ত জিনিস কেনা মানেই অতিরিক্ত বর্জ্য তৈরি করা।
আর সবশেষে আসছে স্থানীয় এবং টেকসই উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করার বিষয়টি। এখন আর শুধু বড় বড় ব্র্যান্ডের পেছনে ছোটা নয়, মানুষ নিজ এলাকার ছোট ছোট উদ্যোগ, যারা পরিবেশবান্ধব উপায়ে পণ্য তৈরি করছে বা সেবা দিচ্ছে, তাদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। যেমন, হাতে তৈরি পণ্য, স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত অর্গানিক সবজি বা ফল, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র নিয়ে কাজ করা ছোট ব্যবসা—এগুলো এখন গ্রাহকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশও উপকৃত হচ্ছে। কারণ এই উদ্যোগগুলো সাধারণত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কম কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি করে এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে।
আসলে এই সবকিছুর পেছনে একটা বড় কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা। মানুষ বুঝতে পারছে যে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা না গেলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই সংকটে পড়বে। তাই টেকসই এবং নৈতিক জীবনযাপন এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তন কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, বরং ধীরে ধীরে সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে, যা আমাদের জন্য এক ইতিবাচক বার্তা।
Post a Comment