ঢাকা, ৩১ মে ২০২৫ – ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এর ৬০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন ড. তাহমিদ আহমেদ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৮৫ সালে একজন মেডিকেল অফিসার হিসেবে এই আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। তার এই দীর্ঘ পথচলা, নিষ্ঠা এবং গবেষণায় অবদান তাকে এই উচ্চ পদে আসীন করেছে।
প্রথম জীবনের সূচনা:
১৯৮৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর ড. তাহমিদ আহমেদ কিছুদিন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি আইসিডিডিআর,বি-তে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সে সময় আইসিডিডিআর,বি-তে কাজ করাকে তিনি ঢাকায় থাকার একটি সুযোগ হিসেবেই দেখছিলেন। তবে সেই শুরুটা যে তাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দেবে এবং বাংলাদেশের জন্য এক নতুন ইতিহাস তৈরি করবে, তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেননি।
গবেষণায় নিরলস অবদান:
ডা. তাহমিদ আহমেদ গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে শিশুদের অপুষ্টি, শিশু যক্ষ্মা এবং ডায়রিয়াজনিত রোগের সহজ ও কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে আসছেন। পুষ্টি বিজ্ঞানে তার গভীর জ্ঞান এবং গবেষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বিশেষত 'বাংলাদেশ এনভাইরনমেন্টাল এনটেরিক ডিসফাংশন (বিড)' নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই গবেষণায় তিনি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা. জেফরি গর্ডনের সাথে একটি যুগান্তকারী গবেষণা পরিচালনা করেন, যা 'মাইক্রোবায়োম-ডিরেক্টেড রেডি-টু-ইউজ থেরাপিউটিক ফুড' উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের পাঁচটি দেশে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পদোন্নতি এবং নেতৃত্ব:
আইসিডিডিআর,বি-তে যোগদানের পর তিনি ধাপে ধাপে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ সালে তিনি 'সায়েন্টিস্ট' পদে উন্নীত হন এবং ২০০৫ সালে পুষ্টি কর্মসূচির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হন। এরপর, ২০২০ সালে যখন বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হয়, সেই সংকটময় সময়ে তিনি আইসিডিডিআর,বি-র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও সেবা প্রদান করে। এই অসাধারণ নেতৃত্ব গুণের ফলস্বরূপ, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি আইসিডিডিআর,বি'র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:
ড. তাহমিদ আহমেদের এই অর্জন কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের চিকিৎসা গবেষণা খাতের জন্য এক বিশাল গর্বের বিষয়। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা সাময়িকী 'টাইম' তাদের ২০২৫ সালের 'বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তি'র তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে তার অবদানের এক বড় স্বীকৃতি। তার এই দৃষ্টান্ত তরুণ বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।
ড. তাহমিদ আহমেদ ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি'স হাই স্কুল এবং নটরডেম কলেজে পড়াশোনা করেছেন। পরে জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার কর্মনিষ্ঠা, দূরদর্শিতা এবং গবেষণায় অসামান্য অবদান তাকে এই শীর্ষ পদে পৌঁছে দিয়েছে, এবং তিনি আইসিডিডিআর,বি'র ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়েছেন।
.jpeg)
Post a Comment