ঢাকা, ২৮ মে ২০২৫: গত ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশজুড়ে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল 'নতুন বাংলাদেশ' গড়ার। কিন্তু এই আশার আলো ম্লান করে দিচ্ছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা: গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, অনেক তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা পুরনো নেটওয়ার্ক সক্রিয় করে চাঁদাবাজি ও খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি ও পুরনো নেটওয়ার্ক সক্রিয়করণ:
শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর, সুব্রত বাইন, পিচ্চি হেলাল, কিলার আব্বাস, ইমন, সুইডেন আসলাম-এর মতো কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকার পরও এদের মধ্যে কোনো সংশোধন আসেনি। বরং, জামিনে বের হয়েই তারা তাদের পুরোনো অপরাধের নেটওয়ার্ক আবার সক্রিয় করে তুলেছে। এই নামগুলো একসময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, আর তাদের ফিরে আসায় আবারও সেই পুরনো আতঙ্ক ফিরছে।
চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের দৌরাত্ম্য:
মুক্তিপ্রাপ্ত এই সন্ত্রাসীরা এখন বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, মার্কেট দখল, এবং নির্মাণাধীন ভবনে প্রভাব বিস্তার করছে। চাঁদা না দিলে গুলি বা বোমা মেরে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় তাদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। এসব এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনাও বাড়ছে। সাধারণ ব্যবসায়ী ও নির্মাণ খাতের সঙ্গে জড়িতরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
খুনোখুনির ঘটনা বৃদ্ধি ও জনমনে আতঙ্ক:
জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের তৎপরতার কারণে দেশজুড়ে খুনোখুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই হত্যাকাণ্ডগুলো আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজির ভাগ-বাঁটোয়ারা বা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ঘটছে। যেমন, মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের নাম খুনের ঘটনায় উঠে এসেছে। এছাড়াও হাতিরঝিল ও মগবাজার এলাকায় সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে ভুগছেন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ:
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যেমন পুলিশ ও র্যাব, এই জামিনপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে বলে জানিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কঠোর নজরদারি এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ অপরিহার্য। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি এই বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের লাগাম টেনে ধরা না যায়, তাহলে 'নতুন বাংলাদেশের' আকাঙ্ক্ষা হুমকির মুখে পড়বে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
বর্তমানে এই অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি অগ্রাধিকার।
Post a Comment