প্রযুক্তি: সাইবার হামলার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি—বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

বাংলাদেশে সাইবার হামলার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি, এর কারণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিয়ে একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ। সাইবার হামলা, ডিজিটাল নিরাপত্তা

 

প্রযুক্তি: সাইবার হামলার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি—বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫ – ডিজিটাল যুগে আমরা যেমন অনেক সুবিধা পাচ্ছি, তেমনি বাড়ছে নতুন এক অদৃশ্য হুমকি—সাইবার হামলা। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ডেটা হ্যাকিং পর্যন্ত, সাইবার আক্রমণের ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বাংলাদেশও এই ঝুঁকির বাইরে নয়। প্রশ্ন হলো, সাইবার হামলার ক্রমবর্ধমান এই বিপদ মোকাবিলায় আমরা কতটা প্রস্তুত এবং আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী?

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। র্যানসমওয়্যার অ্যাটাক, ফিশিং, ডেটা ব্রিচ—এগুলো এখন শুধু খবর নয়, অনেক সময়ই সাধারণ মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের ব্যাংক, সরকারি ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপরও সাইবার হামলার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। গত বছরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ডেটা চুরির ঘটনা সামনে আসায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামো এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব, পুরনো সফটওয়্যার ব্যবহার এবং সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতার অভাব—এগুলোই মূলত আমাদের দুর্বলতা। অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এখনও তাদের ডিজিটাল সুরক্ষাকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে না, যার ফলে তারা সহজেই সাইবার অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। একটি শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা নীতি এবং এর কার্যকর প্রয়োগ ছাড়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন।

সরকার অবশ্য সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন তৈরির কাজ চলছে। ডেটা সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিতভাবে তাদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিরীক্ষা করতে এবং হালনাগাদ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোও জরুরি।

সাইবার হামলা শুধু একটি প্রযুক্তিগত হুমকি নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির ওপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যদি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সাইবার হামলা হয়, তাহলে তা দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সকলেরই সাইবার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ভবিষ্যৎ ডিজিটাল বিশ্বে টিকে থাকতে হলে এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের আরও অনেক বেশি সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে।


Post a Comment

Previous Post Next Post