রাজনীতি: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে টাকার খেলা—গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি হুমকির মুখে?
ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫ – গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে টাকার প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে গভীর সংকটের মুখে ফেলছে। কাউন্সিলর থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান পর্যন্ত, প্রতিটি পদে যেন টাকার খেলা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশ্ন হলো, এই টাকার প্রভাব কি গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে?
সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রার্থীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছেন। নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে ভোটারদের মন জয় করা পর্যন্ত, টাকার ব্যবহার প্রায় প্রকাশ্য। এর ফলে সাধারণ বা সৎ প্রার্থীরা, যাদের আর্থিক সামর্থ্য কম, তারা নির্বাচনী লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। যোগ্যতার চেয়ে অর্থের জোরই যেন নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। এটি একদিকে যেমন নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা হারাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে বাধা দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে টাকার এই প্রভাব বহুবিধ সমস্যা তৈরি করছে। প্রথমত, এটি নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। যারা টাকা খরচ করে নির্বাচিত হন, তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে বিনিয়োগ তুলে আনা, যা সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিপন্থী। দ্বিতীয়ত, এটি তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক চর্চাকে দুর্বল করে। জনগণ তাদের পছন্দের সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না, বরং টাকার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। তৃতীয়ত, এর ফলে রাজনীতিতে পেশীশক্তি ও অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনকারীদের প্রভাব বাড়ছে।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য এই প্রবণতা রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে। নির্বাচনী ব্যয় সীমা নির্ধারণ, নজরদারি বৃদ্ধি এবং আর্থিক লেনদেনের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা চলছে। তবে, বাস্তবে এর প্রয়োগ কতটা সফল হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এই বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। তাদের উচিত যোগ্য ও সৎ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবেশদ্বার। যদি এই প্রবেশদ্বারেই দুর্নীতির শেকড় গেড়ে বসে, তাহলে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতেও তার প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে এখনই টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন মেধা, যোগ্যতা ও জনসেবার মনোভাবই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মূল মাপকাঠি হয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণ—সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।
Post a Comment