১০ বছর পরও রহস্যঘেরা MH370, এখনো অপেক্ষায় স্বজনেরা

সূর্যাস্তের সময় একটি বিশাল, ফাঁকা সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ন্ত একটি বিমানের সিলুয়েট, যা MH370 এর অমীমাংসিত রহস্যের প্রতীক।
১০ বছর পরও রহস্যঘেরা MH370, এখনো অপেক্ষায় স্বজনেরা

 

ঢাকা, ২০ জুন ২০২৫ —

MH370: এক দশক পরও অমীমাংসিত রহস্য, অপেক্ষায় প্রিয়জনেরা

একটি দশক পার হয়ে গেলেও রহস্য ঘনীভূত রয়েছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের MH370 উড়োজাহাজ নিখোঁজের ঘটনা। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিংগামী ফ্লাইটটি ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, কিন্তু মাঝ আকাশে হঠাৎ করেই মিলিয়ে যায় তার অস্তিত্ব। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও এর কোনো নিশ্চিত খোঁজ মেলেনি। এটি এখনো আধুনিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে রহস্যময় ট্র্যাজেডিগুলোর একটি।

নিখোঁজ হওয়ার পরপরই অন্তত ২০টিরও বেশি দেশ এই বিমানের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ এবং সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধান করেও মূল উড়োজাহাজের কোনো চিহ্ন মেলেনি। যদিও আফ্রিকার উপকূল এবং ভারত মহাসাগরের দ্বীপাঞ্চলে কিছু ধ্বংসাবশেষ ভেসে আসে, যার কয়েকটি অংশ যে MH370-এর বলে চিহ্নিত করা হয়, তবুও ব্ল্যাক বক্স বা পুরো বিমানের সন্ধান এখনো অধরা।

মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী সম্প্রতি জানান, MH370-এর সন্ধানে আবারও তল্লাশি চালানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সমুদ্র অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান ওশান ইনফিনিটি-র সঙ্গে 'নো-ফাইন্ড, নো-ফি' ভিত্তিক একটি নতুন চুক্তি করা হয়েছে। অর্থাৎ, বিমানটির ধ্বংসাবশেষ না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কোনো পারিশ্রমিক পাবে না। ২০২৫ সালে প্রায় ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত নতুন এলাকায় অনুসন্ধান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

চীনের যাত্রীদের স্বজনেরা এই দীর্ঘ সময়ের যন্ত্রণা ও অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেইজিংয়ে মালয়েশিয়ান দূতাবাসের সামনে তারা জড়ো হয়ে স্লোগান দেন: "আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দাও!" তারা দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং কার্যকর অনুসন্ধান চেয়েছেন।

এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ইচ্ছাকৃত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, কিংবা হাইজ্যাক তত্ত্বসহ একাধিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কোনোটিই চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়নি। মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ২০১৪ সালের মার্চেই স্যাটেলাইট তথ্যের ভিত্তিতে ঘোষণা করেছিলেন যে, বিমানটি ভারত মহাসাগরের একটি দূরবর্তী অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কিংবা সঠিক অবস্থান এখনো অজানা।

এক দশক পার হলেও MH370 রহস্যের ইতি টানতে পারেনি কেউ। তাই ২০২৫ সালের নতুন অনুসন্ধানই এখন শেষ আশার আলো — যা হয়তো শত প্রশ্নের জবাব দেবে, অথবা অমীমাংসিত অধ্যায়ে আরেকটি প্রশ্ন যোগ করবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post