![]() |
তেলের দামে পতন: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তহীনতার প্রভাব |
তেলের দামে পতন: যুদ্ধকালেও যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ ভুমিকার প্রভাব
ঢাকা, ২১ জুন ২০২৫ —
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে অপ্রত্যাশিতভাবে পতন দেখা দিয়েছে। যেখানে সাধারণত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তেলের দাম বাড়ে, সেখানে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'দুই সপ্তাহ সময় নিয়ে ভাবার' ঘোষণা।
এই মনোভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি সৃষ্টি করেছে। ফলে তেলের বাজারে অস্থিরতা হ্রাস পেয়েছে এবং সাময়িক হলেও একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
বাজারে তেলের দামের বর্তমান অবস্থা
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে:
ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার: ব্যারেলপ্রতি ৬৯.২৮ ডলার, আগের দিনের তুলনায় ৪৯ সেন্ট বা ০.৭ শতাংশ কম।
WTI (জুলাই): ব্যারেলপ্রতি ৭৫.৯৬ ডলার, যা ৮২ সেন্ট বা ১.১ শতাংশ বেশি।
WTI (আগস্ট): ব্যারেলপ্রতি ৭৩.৭৭ ডলার, ২৭ সেন্ট বা ০.৪ শতাংশ কম।
এই দাম পরিবর্তনের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, যদিও সপ্তাহজুড়ে বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল, তবে দিনের হিসেবে একটি সামান্য পতন ঘটেছে।
যুদ্ধ ও বাজারের প্রতিক্রিয়া
গত কয়েকদিনে ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দামে তীব্র পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে, ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের হামলার পরপরই তেলের দাম একলাফে প্রায় ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
তেলের দামে আরও বড় ধরনের লাফের আশঙ্কা তখনই তৈরি হয়, যখন ধারণা করা হচ্ছিল যে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ওই পরিস্থিতিতে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুদ্ধ-সম্পর্কিত বক্তব্য পরিস্থিতিকে ভিন্ন দিকে নেয়। তিনি জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে দুই সপ্তাহ সময় নিয়ে চিন্তা করবেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
এতে বিশ্ববাজার কিছুটা স্বস্তি পায় এবং বিনিয়োগকারীদের ভয়ের মাত্রা কমে আসে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে, যার ফলে তেলের দামের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে।
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে
যদিও এই মুহূর্তে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তীব্র হয়, অথবা যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তেলের বাজার আবারও চরম অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
তবে আপাতত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান এবং সরাসরি হস্তক্ষেপ না করার মনোভাব বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে এক ধরনের ভারসাম্য এনেছে।
Post a Comment