প্রস্রাব চেপে রাখার পরিণতি ভয়াবহ: কী হতে পারে জানেন?

একজন ব্যক্তি অস্বস্তিতে তার তলপেট ধরে আছেন, যা প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে সৃষ্ট শারীরিক অস্বস্তি নির্দেশ করছে।

 মাত্র এক ঘণ্টা প্রস্রাব চেপে রাখলে হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে খুব বড় কোনো বিপদ হবে না, তবে এই অভ্যাস যদি নিয়মিত হয়, তাহলে এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়ার জন্য প্রস্রাব একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটিকে আটকে রাখলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার কিছু গুরুতর পরিণাম নিচে তুলে ধরা হলো:

১. মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI): প্রস্রাবে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো দীর্ঘক্ষণ মূত্রাশয়ে আটকা থাকলে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এতে মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, তলপেটে ব্যথা বা ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা এই সংক্রমণের লক্ষণ।

২. কিডনিতে পাথর: প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থগুলো ঠিকমতো বেরিয়ে যেতে না পারলে সেগুলো কিডনিতে জমা হতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এগুলো কঠিন হয়ে পাথরে পরিণত হতে পারে। কিডনিতে পাথর হলে তীব্র ব্যথা, সংক্রমণ এমনকি রক্তপাতও হতে পারে।

৩. মূত্রাশয়ের ক্ষতি: আমাদের মূত্রাশয় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্রাব ধারণ করতে পারে। যখন এটি পূর্ণ হয়, তখন প্রসারিত হয় এবং প্রস্রাবের পর আবার সংকুচিত হয়। কিন্তু নিয়মিত প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রাশয়ের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে মূত্রাশয় তার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারায় এবং প্রস্রাব ধরে রাখতে বা সম্পূর্ণ খালি করতে সমস্যা হতে পারে।

৪. পেলভিক ফ্লোরের পেশি দুর্বল হওয়া: দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে শ্রোণিতল বা পেলভিক ফ্লোরের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে ভবিষ্যতে হাঁচি, কাশি বা হাসার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব বেরিয়ে যেতে পারে, যা ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স নামে পরিচিত।

৫. ব্যথা: প্রস্রাব চেপে রাখলে কিডনি এবং মূত্রাশয়ের উপর চাপ পড়ে। এর ফলে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। প্রস্রাবের সময়ও ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে।

৬. ভেসিকোরেটেরাল রিফ্লাক্স: কিছু ক্ষেত্রে, দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখলে প্রস্রাব উল্টো পথে কিডনির দিকে প্রবাহিত হতে পারে। এই অবস্থাকে ভেসিকোরেটেরাল রিফ্লাক্স বলা হয়, যা কিডনি সংক্রমণের কারণ হতে পারে এবং ধীরে ধীরে কিডনির ক্ষতি করতে পারে।

সুতরাং, সুস্থ থাকতে হলে প্রস্রাব পেলেই দ্রুত বাথরুমে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে অভিভাবকদের সজাগ থাকা জরুরি।


 তারিখ: June 7, 2025

লেখক: Kazi Fahsin

প্রকাশক: নভোকণ্ঠ (Novonicle)


Post a Comment

Previous Post Next Post