সিন্ধু অববাহিকায় ভারতের নতুন জলাধার: পাকিস্তান কি সংকটে পড়বে?

সিন্ধু নদের উপর নির্মিত একটি বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধের আকাশ থেকে তোলা ছবি, যা ভারতের জলসম্পদ উন্নয়নের প্রতীক।

 

ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, জম্মু-কাশ্মীরে সিন্ধু অববাহিকায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য ভারত আরও বড় জলাধার তৈরি করবে। এই প্রকল্পের কাজ বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই পদক্ষেপ সিন্ধু নদ পানি চুক্তি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান টানাপোড়েনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে মনোহর লাল খাট্টার জানান, সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী যে প্রকল্পগুলোর কাজ ইতিমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে কোনো বদল ঘটানো হবে না। কারণ, সেসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হয়ে আছে। তবে, কিছু নতুন প্রকল্পের কাজ একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এবং সেগুলোর জলাধারের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে, যাতে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী – রাভি (ইরাবতী), বিয়াস ও সুতলেজ (শতদ্রু) – ভারতের অংশে পড়ে। আর পশ্চিমাঞ্চলীয় সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পড়েছে পাকিস্তানের ভাগে। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই এই চুক্তি পরিবর্তন বা পর্যালোচনার দাবি করে আসছে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানিসম্পদের সংকট বাড়ায়।

ভারতের এই নতুন জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। কারণ, পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি কৃষিকাজ এবং এক-তৃতীয়াংশ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সিন্ধু অববাহিকার পানির ওপর নির্ভরশীল। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ভারতের এই ধরনের পদক্ষেপ পাকিস্তানের পানিসংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। পাকিস্তান অতীতেও ভারতের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এবং এমন পদক্ষেপকে 'যুদ্ধের শামিল' বলে অভিহিত করেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চেনাব নদীর উপর চারটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে চায়। এই প্রকল্পগুলি হল পাকাল দুল (১,০০০ মেগাওয়াট), রায়তাল (৮৫০ মেগাওয়াট), কিরু (৬২৪ মেগাওয়াট) এবং কোয়ার (৫৪০ মেগাওয়াট)।1 এই জলাধারগুলো নির্মাণ হলে ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে, কিন্তু এর প্রভাব ভাটির দেশ পাকিস্তানের উপর কতটা পড়বে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


 তারিখ: June 11, 2025

 লেখক: Kazi Fahsin

 প্রকাশক: নভোকণ্ঠ (Novonicle)


Post a Comment

Previous Post Next Post