বিজয়নগরে লিচুর বাম্পার ফলন: বাগান থেকেই সরাসরি কিনছেন ক্রেতারা, হাসি কৃষকের মুখে


 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৩ জুন ২০২৫ – ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে রসালো লিচু, যা স্থানীয়দের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। শুধু তাই নয়, ভালো ফলনের পাশাপাশি ফলন শুরুর প্রথম থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা বাগান থেকেই সরাসরি লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমায় কৃষকরাও পাচ্ছেন ন্যায্যমূল্য।

বিজয়নগর উপজেলায় লিচুর জন্য বিখ্যাত কয়েকটি গ্রাম হলো সিঙ্গারবিল, কালাছড়া, হরষপুর, ইছাপুরা এবং পত্তন। এসব গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই লিচু গাছ দেখা যায়, এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও অনেক বড় বড় লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। এখানকার মাটিতে লিচু চাষের জন্য চমৎকার উপযোগীতা থাকায় প্রতি বছরই ভালো ফলনের আশা থাকে।

ভালো ফলনের কারণ:

কৃষি কর্মকর্তা ও লিচু চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য বেশ অনুকূল ছিল। সময় মতো বৃষ্টিপাত, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং শীতকালের প্রয়োজনীয় ঠাণ্ডা আবহাওয়া লিচুর মুকুল ধরা এবং ফল বড় হতে সহায়তা করেছে। এছাড়া, লিচু চাষিদের উন্নত সার ব্যবস্থাপনা, রোগ ও পোকা দমন বিষয়ে সচেতনতাও ভালো ফলনের পেছনে অবদান রেখেছে।

ক্রেতাদের সরাসরি বাগান থেকে কেনার প্রবণতা:

এ বছর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ক্রেতারা সরাসরি বাগান থেকে লিচু কিনতে আসছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও সাধারণ ক্রেতারা বাগান ঘুরে নিজেদের পছন্দমতো লিচু কিনছেন। এতে করে লিচুর মান যাচাই করা সহজ হচ্ছে এবং ক্রেতারা পাচ্ছেন তাজা লিচু। অন্যদিকে, কৃষকরাও সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারায় মধ্যস্বত্বভোগীদের কমিশন এড়াতে পারছেন এবং ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।

কালাছড়া গ্রামের লিচু চাষি আব্দুর রহমান বলেন, "এবার লিচুর ফলন খুব ভালো হইছে। গতবারের চেয়ে বেশি লাভ হইব আশা করি। মানুষ বাগান থেইকাই কিন্যা নিয়া যাইতাছে, তাই বেচতেও সুবিধা হইতেছে।"

আরেক লিচু চাষি মফিজ মিয়া বলেন, "এইবার প্রথম থেকেই ঢাকার কিছু ব্যাপারী আইসা বাগান থেইকা লিচু নিয়া যাইতাছে। এতে আমাদের আর হাটে বইসা থাকতে হয় না। দামও ভালো পাইতাছি।"

লিচুর প্রকারভেদ ও বাজার দর:

বিজয়নগরে মূলত চায়না-৩, বোম্বাই, মাদ্রাজি ও পাতি লিচুর চাষ হয়। এর মধ্যে চায়না-৩ লিচুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি, কারণ এটি আকারে বড়, রসালো ও সুমিষ্ট।

  • চায়না-৩: প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকায়।
  • বোম্বাই ও মাদ্রাজি: প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়।
  • পাতি লিচু: প্রতি ১০০ লিচু ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এই বছর বিজয়নগরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে এবং প্রায় ১০ হাজার টন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। লিচুর এই বাম্পার ফলন বিজয়নগরের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post