![]() |
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আফ্রিকার নেতাদের সাথে হাসিমুখে করমর্দন করছেন। |
ঢাকা, June 13, 2025 —
চীন কেন আফ্রিকার ৫৩ দেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে চায়?
চীন সম্প্রতি আফ্রিকার ৫৩টি দেশকে ১০০ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটি আফ্রিকার পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে চীনের একটি বড় পদক্ষেপ, যা তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কযুক্ত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন আফ্রিকার পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বাড়তি শুল্ক আরোপের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চীনের এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে বহুমুখী ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল।
প্রথমত, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার: চীন ১৫ বছর ধরে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এই শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে চীন আফ্রিকায় তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব আরও বাড়াতে চায়। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র তার 'আফ্রিকা গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট' (AGOA)-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, তখন চীন এই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে চীন গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর মধ্যে সংহতি ও সহযোগিতা বাড়িয়ে বিশ্ব মঞ্চে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
দ্বিতীয়ত, কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ: আফ্রিকা চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল সরবরাহের উৎস। বিশেষ করে কঙ্গো ও গিনি থেকে চীন প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করে। শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার মাধ্যমে চীন তার শিল্প উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়।
তৃতীয়ত, নিজস্ব পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ: যদিও শুল্কমুক্ত সুবিধা আফ্রিকার পণ্য আমদানির জন্য, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে আফ্রিকার বাজারে চীনের পণ্যের চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও সহায়ক হবে। চীনের বিপুল পরিমাণ শিল্পপণ্য, ইলেকট্রনিক্স এবং মেশিনারি আফ্রিকার বাজারে রপ্তানি হয়। একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব।
চতুর্থত, উন্নয়নশীল অর্থনীতির সমর্থন: চীন নিজেদের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেখে এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে 'একই সম্প্রদায়ের' অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী। আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করে চীন তার বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখতে চায়। এটি আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করবে এবং তাদের রপ্তানি বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে।
পঞ্চমত, প্রতিযোগিতা ও কৌশলগত অবস্থান: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতারা যখন বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিচ্ছেন, তখন চীন শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে একটি উদার বাণিজ্য নীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এটি আফ্রিকার দেশগুলোকে চীনের দিকে আরও আকৃষ্ট করবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের 'অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্যহীন' নীতিকে তুলে ধরবে। শুধু এসোয়াতিনি (তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায়) এই শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকবে, যা চীনের 'এক চীন নীতি'র প্রতি তাদের কঠোর অবস্থানকেও নির্দেশ করে।
Post a Comment