মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার ট্রাম্পের আদেশের সম্ভাব্য রায়

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ভবন, একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি সিদ্ধান্তের প্রতীক।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার ট্রাম্পের আদেশের সম্ভাব্য রায়

 ঢাকা, ২৭ জুন ২০২৫ —


জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিতকরণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র: ১৪তম সংশোধনী বনাম ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ


আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দিতে পারে, যার প্রভাব পড়বে দেশটির জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতিতে এবং প্রতি বছর জন্ম নেওয়া হাজার হাজার শিশুর নাগরিকত্ব প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। বিষয়টি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের মধ্যে সাংবিধানিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।


ট্রাম্পের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মার্কিন মাটিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের কেবল তখনই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, যদি তাদের বাবা-মার মধ্যে অন্তত একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হন। অন্যথায়, ওই শিশুদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল হবে।


এই আদেশ এর আগে মার্কিন নিম্ন আদালতগুলোতে স্থগিত হয়ে ছিল। মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল বিচারকরা এই নির্দেশকে ১৪তম সংশোধনীর বিরোধী বলে উল্লেখ করে সারা দেশে এর কার্যকারিতা বন্ধ রাখেন।


১৮৬৮ সালে গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে প্রণীত ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, "যে কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে এবং এর এখতিয়ারে থাকে, সে আমেরিকার নাগরিক।" বহু বছর ধরেই এই ধারা প্রবাসী, অভিবাসী এবং এমনকি অবৈধ অবস্থানে থাকা অভিভাবকদের সন্তানদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।


কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, ১৪তম সংশোধনী অস্থায়ী ভিসাধারী, অভিবাসন ভিসায় আসা শিক্ষার্থী কিংবা অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই তারা এই সংশোধনীর নতুন ব্যাখ্যা দিতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।


অন্যদিকে, ২২টি রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল, মানবাধিকার সংগঠন ও অভিবাসী পরিবারগুলো ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এই রায়ে ট্রাম্পের পক্ষে রায় গেলে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ নবজাতক নাগরিকত্ব হারাতে পারে — যা আমেরিকার সংবিধানিক কাঠামো ও মূল্যবোধে বড় আঘাত হানবে।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ট্রাম্প প্রশাসন চায় দেশব্যাপী ফেডারেল নিষেধাজ্ঞার ক্ষমতা কমিয়ে আনা হোক এবং রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নে বাধা না দেওয়া হোক — এমনকি আদেশটি সংবিধান সম্মত কি না, তা বিবেচনায় না রেখেও।


বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় শুধু অভিবাসন নীতির দিকেই নয়, বরং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, ফেডারেল বিচারব্যবস্থার সীমা এবং সংবিধান ব্যাখ্যার ইতিহাসেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post