তালেবানকে সবাই হঠাৎ আপন করছে কেন?


 

  • আফগানিস্তানে তালেবান বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে প্রতিবেশীরা, সীমান্ত ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে।

  • চীন, ইরান ও ভারতের মধ্যে তালেবানকে ঘিরে চলছে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, পশ্চিমা প্রভাব ঠেকানো মূল লক্ষ্য।

  • তালেবান স্বীকৃতি না পেলেও বাণিজ্য, পানি ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে আঞ্চলিক শক্তিগুলো কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াচ্ছে।

তালেবান ২০২১ সালে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর, দেশটির রাজনৈতিক চেহারা বদলে গেছে। যদিও এখনো বিশ্ব তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, তবে প্রতিবেশী দেশগুলো একে একে তালেবানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলছে। তারা বুঝেছে, তালেবানকে উপেক্ষা করলে নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ভারসাম্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।

পাকিস্তানের জন্য তালেবান একদিকে কৌশলগত মিত্র, অন্যদিকে হুমকি। কারণ তালেবান আফগানিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP)-এর উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনিচ্ছুক। তারপরও ইসলামাবাদ তালেবানের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, সীমান্ত সহিংসতা ও শরণার্থী ইস্যুতে কিছু সমঝোতা করতে।

চীন আফগানিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়, কারণ দেশটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর অংশ হিসেবে আফগানিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহী। তাছাড়া, উইঘুর মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঠেকাতেও তালেবানের সহযোগিতা তাদের দরকার। এজন্য বাণিজ্য ও কূটনৈতিক স্তরে চীন তালেবানকে পাশে টানছে।

ভারত আগে তালেবানবিরোধী থাকলেও এখন তারা কৌশল পাল্টেছে। পশ্চিমা প্রভাব কমার পর আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারে চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে নয়াদিল্লি তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ছে। তারা কাবুলে হিউম্যানিটেরিয়ান সহায়তা দিয়েছে, এমনকি পুনরায় দূতাবাস খোলার কথাও বিবেচনা করছে।

ইরান তালেবানকে নিয়ে দ্বিধায় থাকলেও সীমান্ত নিরাপত্তা, আফগান শিয়া জনগোষ্ঠী এবং পানি বিতরণ নিয়ে কৌশলগত সংলাপে অংশ নিচ্ছে। ইরান চায় না, তালেবান পশ্চিমা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠুক বা সৌদি-সমর্থিত শক্তির সঙ্গে মিশে যাক।

তালেবান এখনো বিশ্ব মঞ্চে বিচ্ছিন্ন, তবে অঞ্চলীয় শক্তিগুলোর কাছে তারা ক্রমশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। এটি এক ধরনের বাস্তববাদী কূটনীতিরই প্রতিফলন, যেখানে ‘কে ক্ষমতায় আছে’ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘কে কতটা কার্যকর’।

Post a Comment

Previous Post Next Post