গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারেও অমীমাংসা:
বিচার বিভাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদীয় কাঠামোসহ বহু মৌলিক প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত এখনও রয়ে গেছে।
নীতিগত ঐকমত্য কিছু বিষয়ে স্পষ্ট:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হলেও, নারী আসন সংরক্ষণ কিংবা উচ্চকক্ষের গঠন নিয়ে রয়েছে মতবিরোধ।
কিছু প্রস্তাব প্রায় বাতিল:
প্রাদেশিক শাসন, জেলা পরিষদ বিলোপ, ভাইস চেয়ারম্যান পদ তুলে দেওয়ার মতো প্রস্তাবগুলো দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হওয়ার পর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ ঐকমত্য হয়নি। আলোচনায় অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ নমনীয়তা দেখালেও কিছু মৌলিক বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের গঠন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ, সংসদ সদস্যদের একাধিক পদে থাকা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি ও সংবিধান সংশোধনের নিয়ম। এই সব মৌলিক কাঠামো এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছে, যা জাতীয় ঐকমত্য অর্জনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে আশার জায়গাও রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। সংবিধানে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। তবে ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি বাদ রাখার পক্ষে অধিকাংশ দলের অবস্থান স্পষ্ট। এমনকি অনেক দল চায় মূলনীতি আরও সম্প্রসারিত হোক।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন নিয়েও আলোচনায় এসেছে। অধিকাংশ দল উচ্চকক্ষ চায়—যেখানে ১০০ সদস্য থাকবে। তবে এই সদস্যরা নির্বাচিত হবেন কীভাবে, সে বিষয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে। নারী আসন সংরক্ষণের সংখ্যা (১০০) নিয়ে সম্মতি থাকলেও, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত আছে।
নির্বাচন কমিশনের জন্য পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব ইসির অধীনে আনতে সব দলের সম্মতি রয়েছে। একটি স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাবও অধিকাংশ দল মেনে নিয়েছে, যদিও পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ রয়ে গেছে।
বিভিন্ন প্রস্তাবে দলগুলোর তীব্র আপত্তিও দেখা গেছে। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু, জেলা পরিষদ বাতিল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ বিলুপ্ত করা কিংবা ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচন—এসব প্রস্তাব বেশির ভাগ দল প্রত্যাখ্যান করেছে।
এছাড়াও, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আইনি দিক বিবেচনায় এনে অধিকাংশ দল এটি আরও পর্যালোচনার পক্ষে।
সংবিধান সংস্কারে ঐকমত্য অর্জনের প্রক্রিয়া সহজ নয়, তবে দ্বিতীয় দফার আলোচনার মধ্য দিয়ে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি জাতীয় সনদ তৈরির আশাবাদ রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলো কতটা বাস্তবিক নমনীয়তা ও দূরদর্শিতা দেখাতে পারে।
Post a Comment