ঢাকা, ৩১ মে ২০২৫ – পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। এই সময়ে অনেকেই কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু নানা কারণে যদি কেউ কোরবানি দিতে না পারেন, বিশেষ করে আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে, তাহলে কী করবেন—এই প্রশ্ন অনেকের মনেই আসে। ইসলামী শরীয়ত এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী, কোরবানি মূলত সামর্থ্যবান মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। অর্থাৎ, যাদের কাছে তাদের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত সম্পদ বা অর্থ থাকে, কেবল তাদের উপরই কোরবানি ওয়াজিব হয়।
সামর্থ্য না থাকলে কোরবানি ওয়াজিব নয়:
যদি কোনো ব্যক্তির কোরবানি করার মতো আর্থিক সামর্থ্য না থাকে, অর্থাৎ তার কাছে নিজের ও পরিবারের মৌলিক প্রয়োজন (খাবার, বাসস্থান, পোশাক) মেটানোর পর কুরবানির পশুর মূল্য বা তার থেকে বেশি পরিমাণ অতিরিক্ত সম্পদ না থাকে, তাহলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। এক্ষেত্রে তাকে এর জন্য কোনো কিছু করতে হবে না এবং তিনি গুনাহগারও হবেন না। ইসলাম সবসময় সামর্থ্যের ওপর জোর দেয়, তাই আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো কিছুর জন্য বাধ্য করেন না।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি না দিলে:
যদি কোনো ব্যক্তি কোরবানি করার মতো আর্থিক সামর্থ্য রাখেন, কিন্তু কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে (যেমন: আকস্মিক অসুস্থতা, জরুরি ভ্রমণ, বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে) তিনি কোরবানি দিতে পারেননি, তাহলে তার জন্য করণীয় হলো:
- তাকে একটি কুরবানির পশুর বাজার মূল্য (যেমন একটি ছাগল বা দুম্বার যে মূল্য, সেই পরিমাণ টাকা) গরিব-মিসকিনদের মধ্যে সদকা করে দিতে হবে। ইসলামী ফিকাহবিদরা এই বিধানটি উল্লেখ করেছেন এবং এটিকে কুরবানি না করার কাফফারা হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মাধ্যমে কোরবানি দিতে না পারার ত্রুটি কিছুটা হলেও পূরণ হয়।
ভবিষ্যতে কোরবানি করার নিয়ত:
যদি এবার সামর্থ্যের অভাবে কেউ কোরবানি দিতে না পারেন, তবে তিনি মনে মনে আগামী বছর কোরবানি করার দৃঢ় নিয়ত করতে পারেন, যখন তার সামর্থ্য হবে। আল্লাহ নিয়ত অনুযায়ীও প্রতিদান দেন।
সাধারণ দান-সদকার গুরুত্ব:
কোরবানি দিতে না পারলেও, একজন মুসলিম যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু করতে চান, তাহলে তিনি সাধারণ দান-সদকা করতে পারেন। গরিব ও দুস্থদের খাবার, পোশাক বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাহায্য করা যায়। ঈদের দিনে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যেকোনো ধরনের দান-সদকা অনেক সওয়াবের কাজ এবং এর মাধ্যমেও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।
কোরবানি একটি মহান ইবাদত হলেও, এর জন্য নিজেকে ঋণগ্রস্ত করা বা কষ্ট করে সামর্থ্যের বাইরে যাওয়া ইসলামের বিধান নয়। তাই সামর্থ্য না থাকলে অযথা দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহর কাছে তওবা ও অন্য নেক আমলের মাধ্যমে সাওয়াব লাভের চেষ্টা করা উচিত।
Post a Comment