ম্যান্ডেট নিয়ে বোঝাপড়ার ঘাটতি অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে


 চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এক নতুন রাজনৈতিক ম্যান্ডেটের জন্ম দিয়েছিল—একটি রক্তাক্ত পরিবর্তনের প্রত্যাশা, যেখানে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা ছিল স্বচ্ছ গণতন্ত্র, কার্যকর প্রশাসন ও কাঠামোগত সংস্কারের। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে গড়ে উঠা অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি সম্মিলিত সামাজিক চুক্তির প্রতিনিধি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন পথে হাঁটছে। ‘ম্যান্ডেট’ শব্দটি এখন বিভক্ত ব্যাখ্যায় ছিন্নভিন্ন। কেউ বলছে এটি রাজনৈতিক দলগুলোর অর্জন, কেউবা মনে করছে এটি শুধুই ছাত্র আন্দোলনের ফল। অথচ এটি ছিল এক যৌথ প্রতিশ্রুতির রূপ—রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও জনগণের কণ্ঠ মিলিয়ে যে পরিবর্তন চাওয়া হয়েছিল, সেটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

সংস্কার ছিল এই ম্যান্ডেটের মূল স্তম্ভ। প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন, পুলিশ বাহিনী ও জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা আনা, রাজনীতিকে জনমুখী করা—এসব নিয়ে অনেক কাগজে-কলমে পরিকল্পনা হলেও মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা ভিন্ন। কমিশনের পর কমিশন গঠন হলেও জনগণের জীবনে পরিবর্তনের ছাপ নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে সংস্কার কর্মসূচি।

এই সংস্কার ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী তরুণ সমাজ। অভ্যুত্থানের সময় যারা সামনে দাঁড়িয়েছিল, আজ তারা কর্মসংস্থানহীন, সামাজিক ক্লান্তির শিকার। ‘তরুণরা বদল আনবে’ বলা হলেও এখন তাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ শুনছে না। তাদের দাবি, পরিবর্তনের রূপরেখা দৃশ্যমান হোক। ভবিষ্যতের আশ্বাসগুলো যেন না হয় শুধুই প্রতিশ্রুতির প্যাকেট।

রাজনৈতিকভাবে স্বচ্ছতা, প্রশাসনিকভাবে দক্ষতা ও অর্থনৈতিকভাবে ন্যায্যতা—এই তিন চাবিকাঠির মধ্যে একটিও কার্যকর না হলে গণমানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার অসম্ভব। অথচ বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রের ভাষা হয়ে উঠছে আত্মমগ্ন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও দূরবর্তী। এর ফলে সংকট বাড়ছে, আস্থা কমছে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তীব্রতর হচ্ছে।

আজকের বাংলাদেশ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে গণতান্ত্রিক অর্জন, অর্থনৈতিক সুবিচার ও নৈতিক নেতৃত্ব—এই তিনটি একসাথে চাইছে জনগণ। যদি সরকার জনগণের এ আকাঙ্ক্ষাকে অবহেলা করে, তবে একদিন সেই জনগণই হয়তো আরেক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন ম্যান্ডেট গড়বে।

Post a Comment

Previous Post Next Post