উত্তেজনা প্রশমনে ইসরায়েল-সিরিয়ার সরাসরি আলোচনা: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মোড়?


 

দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়া এবং ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। পাঁচটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি বলছে, সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে দুই দেশের কর্মকর্তারা সরাসরি কথা বলছেন। এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই আলোচনার মূলে রয়েছে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিরীয় ইসলামপন্থী শাসকদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা। ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে এই নেপথ্য আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কিছু সূত্র বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই ধরনের আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে।

সিরিয়ার পক্ষ থেকে সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহমেদ আল-দালাতি এই আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি বর্তমানে ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির সীমান্তবর্তী কুনেইত্রা প্রদেশের গভর্নর। সম্প্রতি সুইদা প্রদেশের নিরাপত্তার দায়িত্বও তার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তিনটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই সংলাপের একাধিক ধাপ হয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়, যার মধ্যে কিছু ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলেও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে ইসরায়েলের পক্ষে1 ঠিক কারা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। দুটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা সম্ভবত ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা। উভয় দেশের সরকারই এই বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার মধ্যে সৌদি আরবের রিয়াদে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের পর ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আল-শারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী, যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ হবে।

কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই উদ্যোগ ইসরায়েলের পুরনো কৌশল—সিরিয়াকে দুর্বল ও খণ্ডিত রাখার পরিকল্পনায় এক ধরনের আঘাত হতে পারে। বর্তমানে আলোচনাগুলো মূলত যৌথ নিরাপত্তা ইস্যু এবং সীমান্তে ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ কমানো নিয়ে হলেও, দুটি2 সূত্র জানিয়েছে, এটি ভবিষ্যতে বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার পথ তৈরি করতে পারে।

যদিও আল-শারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো ঘোষণা দেননি, তিনি ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই চুক্তি অনুযায়ী গোলান মালভূমিতে জাতিসংঘের একটি বাফার জোন তৈরি করার কথা ছিল। নতুন সিরীয় প্রশাসন ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়—এই বার্তা স্পষ্ট করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা দামেস্ক ও বিদেশে ইহুদি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদের দুই সিনিয়র নেতাকে আটক করেছে। এছাড়াও, সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে যে, তারা কখনোই সিরিয়াকে এমন কোনো পক্ষের জন্য হুমকির উৎস হতে দেবে না, যার মধ্যে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি, সিরিয়া ইসরায়েলের সাবেক গুপ্তচর এলি কোহেনের কিছু পুরনো ব্যক্তিগত সামগ্রীও ফিরিয়ে দিয়েছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post