তেহরান, ২ জুন ২০২৫ – ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সম্প্রতি যে গোপন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। তেহরান অভিযোগ করেছে, এই প্রতিবেদনটিতে কিছু ভুল তথ্য রয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা। এই অভিযোগ এমন এক সময়ে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে।
রয়টার্স এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আইএইএ-এর গোপন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে না জানিয়ে তিনটি স্থানে গোপন পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অস্ত্র-গ্রেড স্তরের ৯০ শতাংশ থেকে খুব অল্প একটি কারিগরি ধাপ দূরে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া ও অভিযোগ:
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রকে 'অগ্রহণযোগ্য' মনে করে এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, আইএইএ-এর প্রতিবেদনটিতে কিছু ত্রুটিপূর্ণ বা ভুল তথ্য রয়েছে, যা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলে ভুল বার্তা দিচ্ছে। তেহরান বারবার বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকার রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (NPT) অধীনে স্বীকৃত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল এবং কিছু পশ্চিমা দেশ ইরানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করার জন্য আইএইএ-কে ব্যবহার করছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান আলোচনাকে প্রভাবিত করা এবং তেহরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ তৈরি করা।
আলোচনায় নতুন মোড়:
এই বিতর্কের মধ্যেই ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কাছে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে। হোয়াইট হাউস শনিবার (৩১ মে) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচিও স্বীকার করেছেন যে, তেহরান সফরকালে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি 'যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির কিছু বিষয়' তার কাছে উপস্থাপন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। তবে ইরান চায়, তাদের ওপর আরোপিত সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক। বিনিময়ে তারা কিছু পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করতে পারে, কিন্তু পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকার বজায় রাখতে চায়।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইরান একটি পারমাণবিক চুক্তি (জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা জেসিপিওএ) করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান, যার ফলে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। এখন দুই পক্ষই নতুন শর্তে এটি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আইএইএ-এর 'গোপন প্রতিবেদন' নিয়ে এই বিতর্ক চলমান আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Post a Comment