বাজেট ২০২৩-২৪: ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হয়নি – ঢাকা চেম্বার


 

ঢাকা, ২ জুন ২০২৫ – ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে 'ব্যবসাবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব নয়' বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের মতে, এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং বিনিয়োগ বাড়াতে যথেষ্ট সহায়ক হবে না। আজ সোমবার (২ জুন) মতিঝিলের ঢাকা চেম্বার ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম এই মন্তব্য করেন।

আসিফ ইব্রাহিম তার বক্তব্যে বলেন, "আমরা প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য যে ধরনের নীতি সহায়তা এবং অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন ছিল, তার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি, সেখানে বাজেট সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।"

ডিসিসিআইয়ের প্রধান আপত্তির বিষয়গুলো:

১. রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা এবং করের বোঝা: ডিসিসিআই সভাপতি রাজস্ব আহরণে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "যদি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত না হয়, তাহলে সরকারের পক্ষে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি, নতুন করে বিভিন্ন পণ্যে করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে শিল্প বিকাশে বাধা দেবে।"

২. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কার্যকর কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই বলে ডিসিসিআই মনে করে। আসিফ ইব্রাহিম বলেন, "মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তিশালী কোনো কৌশল দেখা যাচ্ছে না।"

৩. বিনিয়োগ আকর্ষণ: দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাজেটে বিশেষ কোনো প্রণোদনা বা নীতি সহায়তা নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, "বিনিয়োগের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং পূর্বাভাসযোগ্য পরিবেশ প্রয়োজন, যা এই বাজেটে অনুপস্থিত। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য যে আস্থা দরকার, তা তৈরি হচ্ছে না।"

৪. বাজেট ঘাটতি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা: প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের ঋণ নির্ভরতা নিয়েও ডিসিসিআই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। "বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে চাপ সৃষ্টি করবে," বলেন আসিফ ইব্রাহিম।

৫. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাজেটে যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়নি বলে ডিসিসিআই মন্তব্য করেছে। তাদের মতে, বিনিয়োগের অভাবে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে না, ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।

তবে, কিছু ইতিবাচক দিকও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন—কৃষি খাতে ভর্তুকি এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সম্প্রসারণ। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ডিসিসিআই মনে করে, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই বাজেট যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে না।

ঢাকা চেম্বার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, বাজেট চূড়ান্ত করার আগে তাদের প্রস্তাবনাগুলো পুনর্বিবেচনা করা হোক। তারা মনে করে, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে এবং সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।


Post a Comment

Previous Post Next Post