ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫ – ঈদুল আজহা সমাগত। এই ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য ত্যাগের মহিমা ও মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এক বিশেষ উৎসব। কোরবানির পশু নির্বাচন এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোরবানির জন্য কোন পশুটি সেরা, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে। ধর্মীয় বিধান এবং বাস্তবতার নিরিখে কোরবানির জন্য সেরা পশু নির্বাচন নিয়ে একটি আলোচনা নিচে তুলে ধরা হলো।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সেরা পশু:
ইসলামিক শরিয়ত অনুযায়ী, কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট কিছু পশু হালাল করা হয়েছে। এগুলো হলো:
- উট
- গরু (মহিষও গরুর অন্তর্ভুক্ত)
- দুম্বা
- ভেড়া
- ছাগল
এই পশুগুলোর মধ্যে সবগুলিই কোরবানির জন্য জায়েজ। তবে, ধর্মীয় জ্ঞানে এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল অনুযায়ী কিছু পশুকে অন্যগুলোর চেয়ে উত্তম হিসেবে ধরা হয়।
১. উট: কোরবানির পশুর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো উট। তবে, এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব একটা সহজলভ্য নয়। একটি উট ৭ থেকে ১০ জনের জন্য কোরবানি দেওয়া যায়।
২. গরু ও মহিষ: উটের পরেই গরুর স্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোরবানির পশু। একটি গরু বা মহিষ সর্বোচ্চ ৭ জনের জন্য কোরবানি দেওয়া যায়। এটি একইসাথে মাংসের পরিমাণ এবং পারিবারিক অংশগ্রহণের সুবিধার কারণে বেশি পছন্দনীয়।
৩. দুম্বা ও ভেড়া: এরপরের স্থানে রয়েছে দুম্বা ও ভেড়া। এগুলো সাধারণত ছোট পশুর অন্তর্ভুক্ত, যা একজনের জন্য কোরবানি দেওয়া হয়। তবে, যদি একটি দুম্বা বা ভেড়া আকারে বড় হয়, তাহলে সর্বোচ্চ ৭ জনের জন্য কোরবানি দেওয়া যেতে পারে – তবে এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সাধারণভাবে, ভেড়া-দুম্বা একজনের জন্য প্রযোজ্য।
৪. ছাগল: কোরবানির পশুর মধ্যে ছাগল সর্বনিম্ন স্থানের, তবে এটিও সম্পূর্ণরূপে জায়েজ। ছাগলও একজনের জন্য কোরবানি দেওয়া হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুস্থ ও ত্রুটিমুক্ত পশু:
কোরবানির জন্য পশুর প্রকারভেদের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো পশুর সুস্থতা এবং ত্রুটিমুক্ত হওয়া। ইসলামে এমন পশুকে কোরবানি করা জায়েজ নয়, যার মধ্যে গুরুতর কোনো ত্রুটি আছে। যেমন:
- যে পশু গুরুতর অসুস্থ বা খোঁড়া, যা হেঁটে কোরবানির স্থানে যেতে পারে না।
- যে পশুর এক বা উভয় চোখ কানা।
- যে পশুর কানে বা লেজে অর্ধেকের বেশি অংশ কাটা।
- যে পশুর কোনো শিং গোড়া থেকে ভেঙে গেছে।
- যে পশু অত্যন্ত দুর্বল বা হাড্ডিসার, যার শরীরে মাংসের পরিমাণ খুব কম।
- যে পশুর বয়স শরিয়তসম্মত হয়নি (ছাগল-ভেড়া কমপক্ষে ১ বছর, গরু-মহিষ কমপক্ষে ২ বছর এবং উট কমপক্ষে ৫ বছর)।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেরা পশু:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোরবানির জন্য সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় এবং উপযুক্ত পশু হলো গরু। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে:
- সহজলভ্যতা: সারা দেশে গরু তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য।
- মাসিক চাহিদা: একটি গরু একাধিক (সর্বোচ্চ ৭ জন) ব্যক্তির অংশগ্রহণে কোরবানি দেওয়া যায়, যা পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে কোরবানি ভাগাভাগির সুবিধা দেয়।
- মাংসের পরিমাণ: গরুতে যথেষ্ট পরিমাণ মাংস পাওয়া যায়, যা ঈদ উপলক্ষে গোশত বিতরণ ও সংরক্ষণে সুবিধা হয়।
- বাজার মূল্য: গরুর দাম যদিও বাড়তি থাকে, তবে এর সার্বিক সুবিধা বিবেচনায় এটিই অধিকাংশের প্রথম পছন্দ।
তবে, যারা ছোট পরিবারে বা এককভাবে কোরবানি দিতে চান, তাদের জন্য ছাগল বা ভেড়াও উত্তম। এটি বাজেট-বান্ধব এবং পরিচালনার দিক থেকেও সহজ।
শেষ পর্যন্ত, কোরবানির জন্য সেরা পশু নির্বাচন নির্ভর করে ব্যক্তির আর্থিক সক্ষমতা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা এবং স্থানীয় সহজলভ্যতার ওপর। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো, পশুটি যেন সুস্থ, ত্রুটিমুক্ত এবং শরিয়তসম্মত হয়।
Post a Comment