আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ পরিকল্পনা: ক্রিকেটকে বদলে দিতে চান নতুন বিসিবি সভাপতি


 ঢাকা, ১ জুন ২০২৫ – মাত্র দুই দিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল1 দায়িত্ব পেয়েই তিনি দেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এক উচ্চাভিলাষী 'ট্রিপল সেঞ্চুরি' পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছেন। দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কাঠামো এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিয়ে তিনি এই নতুন অধ্যায় শুরু করতে চান।

গতকাল রবিবার (৩১ মে) যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাথে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বৈঠক শেষে আমিনুল ইসলাম বুলবুল তার এই পরিকল্পনা গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।2 তিনি বলেছেন, "আমরা তিনটি কাজ করছি, আমরা বলছি যে 'ট্রিপল সেঞ্চুরি' করব – শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম ও শতভাগ রিচ।"

বুলবুলের 'ট্রিপল সেঞ্চুরি' পরিকল্পনার মূল দিকগুলো হলো:

১. শতভাগ ট্রাস্ট (আস্থা): আমিনুল ইসলাম বুলবুল বোর্ডের ভেতরে এবং বাইরে সবার আস্থা অর্জন করতে চান। তিনি চান, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হোক, যাতে খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা, এমনকি সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরাও বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন। তিনি অতীতে বোর্ডের নানা অভ্যন্তরীণ বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।

২. শতভাগ প্রোগ্রাম (পরিকল্পনা): নতুন সভাপতি দেশের ক্রিকেটের প্রতিটি স্তরের জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর প্রোগ্রাম তৈরি করতে চান। এর মধ্যে তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিভা অন্বেষণ, প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নের একটি সমন্বিত কাঠামো থাকবে। তিনি বলেন, "আমরা চাচ্ছি গ্রামের একটা ছেলে যেন ভালো খেলে উপজেলায় আসতে পারে... উপজেলা থেকে জেলায়, জেলা থেকে বিভাগে এবং বিভাগীয় পর্যায় থেকে যেন জাতীয় পর্যায়ে আসতে পারে সেই রাস্তাটা পরিষ্কার করছি।"3

৩. শতভাগ রিচ (বিস্তার): বুলবুল ক্রিকেটকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান। শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়, বরং দেশের প্রতিটি প্রান্তে ক্রিকেটের আলো পৌঁছে দেওয়াই তার লক্ষ্য। এই 'শতভাগ রিচ' বাস্তবায়নের জন্য তিনি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে চান। পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রামে আঞ্চলিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা 'মিনি বিসিবি' হিসেবে কাজ করবে। স্কুল ক্রিকেট ও গেম ডেভেলপমেন্টের মতো কার্যক্রমগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে নয়, বরং স্থানীয়ভাবেই পরিচালিত হবে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ:

  • মানবসম্পদ উন্নয়ন: বুলবুল মনে করেন, খেলোয়াড় তৈরির পাশাপাশি কোচ, আম্পায়ার এবং অন্যান্য ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও দক্ষ করে তোলা জরুরি। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাও যে আন্তর্জাতিক কোচ হতে আগ্রহী, সেই তথ্যও তিনি প্রকাশ করেছেন। তিনি এই ধরনের ট্রেনিং ও এডুকেশন প্রোগ্রামগুলো বিসিবির মাধ্যমে চালানোর কথা বলেছেন।
  • ট্রান্সপারেন্সি ও সুশাসন: তিনি প্রতিটি বিভাগে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে চান। সব পরিচালকদের আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তাদের বিভাগের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে বলা হয়েছে।
  • চারটি নতুন কর্মসূচি: বোর্ডের অধীনে চারটি নতুন কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যেগুলোর নাম হলো: 'প্রটেক্ট দ্য স্পিরিট অব দ্য গেম', 'হাই পারফরম্যান্স ফর এভরিওয়ান', 'কানেক্ট অ্যান্ড গ্রো' এবং 'ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড গুড গভর্নেন্স ইন অল এরিয়াস'।

দীর্ঘদিন আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমিনুল ইসলাম বুলবুলের রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে চান। তিনি মনে করেন, এই 'ট্রিপল সেঞ্চুরি' পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেট একটি টেকসই এবং শক্তিশালী ভিত্তি পাবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post