স্বাস্থ্য: অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের নীরব ঘাতক—বাংলাদেশের জন্য এক মহাবিপদ!

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি, এর কারণ, জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাব এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, জনস্বাস্থ্য

 



স্বাস্থ্য: অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের নীরব ঘাতক—বাংলাদেশের জন্য এক মহাবিপদ!

ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৫ – এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে নীরব যুদ্ধ চলছে পৃথিবীজুড়ে, আর এই যুদ্ধে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছি। এই শত্রু হলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)। অর্থাৎ, যখন অ্যান্টিবায়োটিকগুলো জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশে এই নীরব ঘাতক এখন এক মহাবিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁকিতে ফেলছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, বিশেষ করে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বা অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফার্মেসি থেকে সহজে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার সুযোগ, কোর্স সম্পন্ন না করা, এবং পশুচিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার—এই সবকিছুই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলস্বরূপ, সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে জটিল সংক্রমণ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে এমন এক সময় আসবে যখন ছোটখাটো সংক্রমণও প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে। অস্ত্রোপচার, ক্যান্সার চিকিৎসা বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাতেও অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। এটি কেবল ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নয়, বরং দেশের সার্বিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরও বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়বে এবং রোগীর সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।

সরকার এবং স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। 'এক স্বাস্থ্য' (One Health) পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে মানুষ, পশু এবং পরিবেশ—সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর প্রয়োগের দাবি উঠেছে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় বন্ধ করা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স সম্পন্ন করার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা অপরিহার্য।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এবং দ্রুত বর্ধনশীল দেশে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে। এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হব, যেখানে সাধারণ রোগও দুরারোগ্য হয়ে উঠবে।


Post a Comment

Previous Post Next Post