আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার (International Booker Prize)


আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ একটি পুরস্কার। এটি মূলত এমন একটি উপন্যাসের জন্য প্রদান করা হয় যা প্রথমত অন্য কোনো ভাষায় লেখা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এই পুরস্কার লেখক এবং অনুবাদক উভয়ের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।

ইতিহাস ও বিবর্তন:

  • ২০০৫ সালে শুরু: প্রাথমিকভাবে 'ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ' নামে ২০০৫ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। তখন এটি প্রতি দুই বছর অন্তর একজন লেখকের সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য দেওয়া হতো, যেখানে কাজের মূল ভাষা ইংরেজি না হলেও চলত।
  • ২০১৬ সালের পরিবর্তন: ২০১৬ সাল থেকে পুরস্কারের নিয়মে বড় পরিবর্তন আনা হয়। এরপর থেকে এটি বার্ষিক পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট বই (উপন্যাস বা ছোটগল্প সংকলন) যা ইংরেজিতে অনূদিত ও যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত হয়েছে, তার জন্য দেওয়া হয়। এর ফলে পুরস্কারটি সরাসরি ইংরেজি ভাষায় লেখা উপন্যাসের জন্য প্রদত্ত 'বুকার পুরস্কার'-এর একটি "মিরর ইমেজ" বা প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছে।
  • উদ্দেশ্য: এই পুরস্কারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানসম্পন্ন কথাসাহিত্যের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ তৈরি করা এবং অনুবাদকদের গুরুত্বপূর্ণ কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া।

পুরস্কারের মূল্য ও সম্মাননা:

  • পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০,০০০ পাউন্ড। এই অর্থ লেখক ও অনুবাদকের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়।
  • এছাড়াও, সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা প্রতিটি বইয়ের লেখক ও অনুবাদক ২,৫০০ পাউন্ড করে পান।
  • বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন এই পুরস্কারের আয়োজন করে থাকে।

নির্বাচন প্রক্রিয়া:

  • প্রতি বছর একটি পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেল নিয়োগ করা হয়, যা লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক, এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়।
  • বিচারকরা দীর্ঘ তালিকা (longlist), সংক্ষিপ্ত তালিকা (shortlist) এবং সবশেষে বিজয়ী নির্বাচন করেন।
  • ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার বিজয়ী হলেন ভারতীয় লেখক বানু মুশতাক (Banu Mushtaq) তার কান্নাড়া ভাষার ছোটগল্প সংকলন 'হার্ট ল্যাম্প: সিলেক্টেড স্টোরিজ' (Heart Lamp: Selected Stories)-এর জন্য, যা দীপা ভাস্তি (Deepa Bhasthi) দ্বারা ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (United Nations Development Programme - UNDP)

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) জাতিসংঘের একটি প্রধান উন্নয়নমূলক সংস্থা। এটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭০টি দেশ ও অঞ্চলে কাজ করে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য হ্রাস এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্য।

উদ্দেশ্য ও ম্যান্ডেট:

  • দারিদ্র্য দূরীকরণ: ইউএনডিপি'র প্রধান লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। তারা অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি, সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিগুলোকে দেশের বৃহত্তর উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে কাজ করে।
  • অসমতা ও বর্জন হ্রাস: বিভিন্ন সমাজে বিদ্যমান অসমতা ও বঞ্চনা কমানোর জন্য ইউএনডিপি কাজ করে।
  • গণতান্ত্রিক শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা: ইউএনডিপি দেশগুলোকে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, আইনের শাসন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তা করে। তারা নীতিগত পরামর্শ, কারিগরি সহায়তা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে জনমত তৈরি করতে কাজ করে।
  • জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহনশীলতা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য দেশগুলোকে সক্ষম করে তোলা ইউএনডিপি'র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তারা দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস, জরুরি পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘমেয়াদী সহনশীলতা তৈরিতে সহায়তা করে।
  • টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জন: ইউএনডিপি জাতিসংঘের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশগুলোকে নেতৃত্ব দেয় এবং সহায়তা করে।

গঠন ও কার্যপ্রণালী:

  • প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর ইউএনডিপি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি পূর্বেকার 'বর্ধিত কারিগরি সহায়তা কর্মসূচি (EPTA)' এবং 'বিশেষ তহবিল'-এর একীভূত রূপ।
  • সদর দপ্তর: এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত।
  • অর্থায়ন: ইউএনডিপি সম্পূর্ণরূপে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বেচ্ছামূলক অনুদান দ্বারা পরিচালিত হয়।
  • কার্যক্রম: ইউএনডিপি দেশীয় সরকারের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। তারা স্থানীয় চাহিদা মূল্যায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমন্বিত পরিকল্পনা এবং নীতি ও মান নির্ধারণে সহায়তা করে।
  • বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশেও ইউএনডিপি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা দারিদ্র্য দূরীকরণ, গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সাথে কাজ করে চলেছে।

ইউএনডিপি বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এবং আরও ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই বিশ্ব গড়তে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post