ঢাকায় অপহরণের পর নগ্ন ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি, কলেজছাত্রী উদ্ধার



ঢাকা, ৩০ মে ২০২৫: রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে অপহৃত এক কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় জড়িত পেশাদার অপহরণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এই চক্রটি শুধু এই কলেজছাত্রীকেই নয়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আরও অনেক কিশোরীকে অপহরণ করে তাদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করতো এবং সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করতো বলে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উদ্ধারকৃত কলেজছাত্রী দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি গত ২৬ মে রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার পরিবার উদ্বিগ্ন ছিল। ২৮ মে রাত ২টা ৩৬ মিনিটে অপহৃত ছাত্রীর মায়ের মোবাইলে একটি ফোন আসে। অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় তারা তাদের কাছে থাকা কলেজছাত্রীর নগ্ন ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ঢাকা মহানগর পুলিশ, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারী চক্রটিকে শনাক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

২৯ মে রাতে পুলিশ উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায়। সেই বাসা থেকেই অপহৃত কলেজছাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একই সময়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজন অপহরণকারীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: মো. মাসুম পারভেজ (৩৮), মো. সোলাইমান হোসেন (৩৮), শফিকুল ইসলাম সৌরভ (২৭), মোছা. মায়া (২৫) ও মোছা. রুলি খানম (১৯)।

অভিযান চলাকালীন তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর সব আলামত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিপণ বাবদ আদায় করা প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা নগদ, ৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, দুটি সিসি ক্যামেরা এবং তিনটি মোবাইল ফোন। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং মাদকদ্রব্য চক্রটির বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা নিজেদের একটি পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন বয়সের কিশোরীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাদে ফেলা এবং অপহরণ করা। এরপর তাদের আটকে রেখে জোরপূর্বক নগ্ন ভিডিও ও ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের হুমকি দিতো। এভাবে তারা পরিবারগুলোর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতো।

এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আজই (৩০ মে) আদালতে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা রাজধানীতে কিশোরীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।


Post a Comment

Previous Post Next Post