ফুটবলার নাকি বন্ড? শন কনারির জীবনের এক অবিশ্বাস্য মোড়


 ফুটবল মাঠ থেকে ফিল্মের সেটে:

ফুটবল খেলার স্বপ্ন ছিল কনারির, কিন্তু শেষমেশ হয়ে উঠলেন হলিউডের কালজয়ী এজেন্ট—জেমস বন্ড।

ম্যানইউয়ের ডাক ফিরিয়ে দিলেন:
স্যার ম্যাট বাসবির সরাসরি অফার পেয়েও ফুটবল ক্যারিয়াকে না বলেছিলেন ভবিষ্যতের ০০৭।

সময় বদলায়, কিংবদন্তি থেকে কিংবদন্তিতেও পৌঁছায়:
কোনো মাঠ নয়, বড় পর্দাই হয়ে উঠেছিল কনারির আসল খেলার জায়গা, যেখানে তিনিই বন্ডের আসল রূপ।


“বন্ড, জেমস বন্ড।”
এই সংলাপ শোনামাত্রই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি মুখ। স্মার্ট স্যুট, ঠোঁটে সিগারেট, আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর চেহারা। সেই মুখটি শন কনারির। তবে এই পরিচয়ের বাইরেও ছিল এক অন্য কাহিনি—তিনি হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার।

১৯৫০-এর দশকের শুরুতে, স্কটল্যান্ডের একটি ক্লাব বনিরিগ রোজে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলতেন তরুণ কনারি। উচ্চতা ছিল ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, গঠন অ্যাথলেটিক, গতি ভালো, এবং ছিলেন খেলায় মনোযোগী। ফুটবল খেলতে খেলতেই একসময় তাঁর ওপর নজর পড়ে এক কিংবদন্তির—ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ স্যার ম্যাট বাসবি। তিনি নিজের চোখে ম্যাচ দেখে প্রস্তাব দেন কনারিকে—ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে চান কি না, সপ্তাহে ২৫ পাউন্ড বেতন দেওয়া হবে।

একজন তরুণ ফুটবলারের জন্য এমন প্রস্তাব স্বপ্নের মতো। কিন্তু কনারি চিন্তায় পড়ে যান। তিনি ভাবলেন, “ফুটবল হয়তো আমাকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত টিকিয়ে রাখবে। কিন্তু অভিনয়? সেটা আমি সারাজীবন করতে পারব।” কল্পনার জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন—ফুটবল নয়, তিনি যাবেন অভিনয়ের পথে।

এ সিদ্ধান্ত কতটা যুগান্তকারী ছিল, সেটা আজ স্পষ্ট। ১৯৬২ সালে ‘ডক্টর নো’ ছবিতে জেমস বন্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কনারি। তারপর একে একে অভিনয় করেন সাতটি বন্ড ফিল্মে। শুধু বন্ড চরিত্র নয়, ‘দ্য রক’, ‘দ্য আনটাচেবলস’, ‘হান্ট ফর রেড অক্টোবর’-এর মতো অসংখ্য কালজয়ী সিনেমায় তিনি দেখিয়েছেন অনন্য প্রতিভা। ‘দ্য আনটাচেবলস’-এর জন্য ১৯৮৭ সালে জেতেন অস্কার।

স্যার ম্যাট বাসবি যদি একটু বেশি জোর দিতেন, কনারি হয়তো থাকতেন অল্ড ট্র্যাফোর্ডের উইঙ্গার হিসেবে। হয়তো ববি চার্লটনের সতীর্থ হতেন। হয়তো ইতিহাস তাঁকে মনে রাখত একজন দক্ষ মিডফিল্ডার হিসেবে। কিন্তু তখন আর কে বলত, "বন্ড, জেমস বন্ড?"

হয়তো নিয়তিরই ইশারা ছিল—একজন সুপারস্টার হবেন, তবে মাঠে নয়; সিনেমার পর্দায়। ফুটবল না হয় একটি ‘মিসড পেনাল্টি’, কিন্তু হলিউড পেল তার এক অনন্য গোল।

Post a Comment

Previous Post Next Post