সিলেট, ৩১ মে ২০২৫ – ঈদ মানেই ঘরে ফেরা, প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। কিন্তু দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করা হাজার হাজার ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীদের জন্য ঈদ মানেই ব্যস্ত সড়ক আর নির্ঘুম রাত। সিলেটের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, শুধু এই জেলাতেই অন্তত ২২ হাজার ট্রাকচালক ও শ্রমিককে এবারও ঈদ কাটাতে হচ্ছে সড়কেই, তাদের ঘরে ফেরা হচ্ছে না। যখন পুরো শহর ফাঁকা, তখন তাদের জীবন চলে চাকার ঘূর্ণনে।
পরিবহন শ্রমিকদের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক, পিকআপ ও ডিআই ট্রাক চলাচল করে। এসব পরিবহনের সাথে সরাসরি যুক্ত আছেন ২২ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। এদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের বৈধ কার্ড থাকলেও বাকিদের কোনো আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র নেই, কিন্তু তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
কোরবানির ঈদ এলে এই শ্রমিকদের ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। সিলেট নগরীর কাজিরবাজারের মতো বড় পশুর হাটগুলো ঘিরে তাদের আয়-রোজগারের পথ তৈরি হয়। জেলার বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট থেকেও পশু আনা-নেওয়ার কাজে তাদের অবিরাম ছুটতে হয়। কাজিরবাজারের একজন মিনি ট্রাকচালক কালাম মিয়া জানান, ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে কাজিরবাজারের সামনের সড়কে শত শত ট্রাকচালক ট্রিপের আশায় অপেক্ষা করেন। এখানে নির্ধারিত কোনো ভাড়া থাকে না, দূরত্বের ওপর নির্ভর করে ভাড়া ঠিক হয়।
তিনি আরও বলেন, "দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক ট্রাকচালক এই বাজারে আসেন। তাদের হিসেবও ভিন্ন, তারা দিনে একাধিক ট্রিপ দেন এবং আয়ও বেশি করেন।" আরেক ট্রাকচালক শাহীনুর ইসলাম জানান, ঈদের দুদিন আগে থেকে তাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। অনেকে শহর থেকে বড় গরু কিনে গ্রামে কোরবানি দেন, আর সেই পশু পরিবহনের জন্য একটি মিনি ট্রাক লাগে। কখনো কখনো একাধিক পশুও একসঙ্গে বহন করতে হয়।
এই ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় ঈদ নামাজও পথেঘাটে পড়তে হয় তাদের। চালকের সহকারী আব্দুর রহিম আক্ষেপ করে বলেন, "আমরাতো গরুর সঙ্গে ঈদ করি। ঈদের দিনেও যদি মাল ডেলিভারি দিতে না পারি, তাহলে বেতনও ঠিকমতো পাই না।"
আসলে, সারা বছর ধরে নিরলসভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এই শ্রমিকদের আত্মত্যাগ আমাদের সবার জন্য এক বড় উদাহরণ। তাদের ঈদ পরিবার থেকে দূরে, সড়কেই কাটে, কারণ মানুষের ঘরে ঈদ আনন্দ পৌঁছে দিতে তাদের ছুটতে হয় অবিরাম।
Post a Comment