চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো জোড়া লাগানো যমজ শিশুকে সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে। নগরীর অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে জন্মের মাত্র ২৩ ঘণ্টার মধ্যে এই জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যা দেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এমন অস্ত্রোপচারের রেকর্ড বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা ।
গত ৬ মে সাতকানিয়া উপজেলার সুরাইয়া বেগম সিজারিয়ানের মাধ্যমে যমজ সন্তান জন্ম দেন। পরদিন ৭ মে, শিশু সার্জন ডা. আদনান ওয়ালিদের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল তিন ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারে দুই শিশুকে আলাদা করেন। শিশুদের নাম রাখা হয়েছে রিয়াশাদ জাফর চৌধুরী ও রেনিশ জাফর চৌধুরী।
অস্ত্রোপচারের সময় দেখা যায়, দুই নবজাতকের বুক ও পেটের অংশ প্রায় আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত সংযুক্ত ছিল এবং শ্বাসনালির একটি অংশও একসঙ্গে ছিল। তবে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার ও কিডনি আলাদা থাকায় অস্ত্রোপচার কিছুটা সহজ হয় ।
প্রসূতিবিশেষজ্ঞ ডা. রেশমা শারমিন জানান, গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে শিশু দুটি জোড়া লাগানো বলে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে আরও দুবার আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। গর্ভাবস্থায় এক শিশুর রক্ত সঞ্চালন কম পাওয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। ৩৪ সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশু দুটির। জন্মের সময় তাদের ওজন ছিল যথাক্রমে ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রামে
শিশুদের বাবা রিয়াজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, “২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে যখন বিষয়টি ধরা পড়ে, তখন থেকে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। চিকিৎসকরা সাহস জুগিয়েছেন, তাদের কারণেই আমরা এই অস্ত্রোপচারে সম্মত হই। এখন আমরা দুই সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি।”
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি দুই লাখ শিশুর মধ্যে একজন এভাবে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্মায়। এদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ একত্রে সংযুক্ত থাকায় ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে চিকিৎসকরা মনে করছেন, চট্টগ্রামের এই দুই নবজাতকের ক্ষেত্রে এমন শঙ্কা নেই ।
Post a Comment