রাজনীতির জন্য ‘ফের ভর্তি’
এইচএসসি পাস করেও রাজনীতিতে পদ পাওয়ার আশায় আবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন মেহেরাব হোসেন।
ছাত্র নয়, ‘ছাত্র রাজনীতিক’
ছাত্রত্বের শর্ত পূরণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কলেজে ফেরা প্রশ্ন তুলেছে নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে।
দলীয় ত্যাগী কর্মীদের ক্ষোভ
পুরনো নেতা-কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিনের ত্যাগ উপেক্ষা করে ‘নাটকীয়’ ছাত্র বানানো হয়েছে একজনকে।
লক্ষ্মীপুরে ছাত্র রাজনীতির মাঠে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম—মেহেরাব হোসেন। এই নাম শুধু এক ছাত্রনেতার পদপ্রাপ্তির গল্প নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থা, নৈতিকতা ও রাজনীতির বাস্তবতার এক জটিল মিশ্র চিত্র।
২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করা মেহেরাব স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন, তবে এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ভর্তি বাতিল হয়ে যায়। বছর কয়েক বাদে, সরকার পরিবর্তনের পর দেশে ফিরে এসে কলেজ রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কিন্তু এখানে বাধা ছিল—কলেজ ছাত্রদলের পদ পেতে হলে সেই কলেজের ‘বর্তমান ছাত্র’ হতে হয়। এই বাধা কাটাতে মেহেরাব আবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তবে এবার সাধারণ একাদশ নয়, বরং সমমানের একটি শাখা—বিএমটি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি)-তে। এই পুনরায় ভর্তিকেই অনেকে বলছেন ‘পদের জন্য প্ল্যানড ভর্তি’।
ছাত্রদলের জেলা শাখা সম্প্রতি কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। সেখানে মেহেরাবকে করা হয় আহ্বায়ক, আর আজিম হোসেন সদস্যসচিব। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা অনেকেই এই সিদ্ধান্তে হতাশ। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন স্পষ্টভাবেই বলেছেন, দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে রহস্যজনকভাবে মেহেরাবকে পদ দেওয়া হয়েছে। এতে নেতৃত্বের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কলেজের কয়েকজন শিক্ষকও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন—একজন এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী কীভাবে আবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন? তাদের বক্তব্য, একাদশ শ্রেণি বা বিএমটি হোক—এই পর্যায়ে আবার ভর্তি হওয়া কেবল নিয়ম নয়, নৈতিক দিক থেকেও প্রশ্নবিদ্ধ।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে, দুঃসময়ে সংগঠনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের সুসময়ে মূল্যায়ন করাটা দলীয় নীতি। আর এ কমিটি মাত্র এক মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি—তাই এই নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া অযৌক্তিক বলেও তিনি জানান।
কিন্তু সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একটাই প্রশ্ন—রাজনীতিতে নেতৃত্ব পেতে যদি ছাত্রত্বে ‘অভিনয়’ করতে হয়, তাহলে প্রকৃত ছাত্ররা কোথায় দাঁড়াবে? শিক্ষা কি শুধুই কাগজে নাম লেখানোর মাধ্যম? ছাত্র রাজনীতি কি কৌশলের চেয়ে আদর্শকে প্রাধান্য দেয় না?
মেহেরাবের এই ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তির নয়—এটি ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থা, আদর্শহীনতার বিপদ এবং একটি গোটা প্রজন্মের আস্থার সংকটের প্রতিচ্ছবি।
Post a Comment